আত্মার খোরাক জোগায় বিশ্ব ইজতেমা

আত্মার খোরাক জোগায় বিশ্ব ইজতেমা

ইজতেমা বিশ্বের মুসলমানদের এক মিলন মেলা। হযরতজী ইলিয়াছ রহ. কর্তৃক প্রণীত দাওয়াত ইলাল্লাহর এর অন্যতম পদ্ধতির নাম “দাওয়াত ও তাবলিগ”।

ভারত উপমহাদেশ সহ সারা বিশ্বের মুসলিম উম্মাহ যখন যখন পশ্চিমাদের কৃষ্টিকালচার আর সভ্যতায় গা ভাসিয়ে দিয়েছিল, নানাবিধ চক্রান্ত ও ভ্রান্তির বেড়াজালে মুখ থুবড়ে পড়েছিলো, ঠিক সেই সময়ে দারুল উলুম দেওবন্দের সূর্য সন্তান ইলিয়াছ রহ. দিকভ্রান্ত মুসলিম উম্মাহকে হক ও হক্যানিয়াতের ছায়ায় সমাবেত করার এক দূরদর্শী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। প্রবর্তন করলেন ছয় উসুল সম্বলিত একটি দাওয়াত পদ্ধতি যা দাওয়াত ও তাবলিগ নামে প্রসিদ্ধি লাভ করে এখন পর্যন্ত চলে আসছে।

এ দাওয়াত ও তাবলিগের মাধ্যমে ইসলামের বাণীকে সমগ্র বিশ্বের মানুষের নিকট পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যেই বাংলাদেশে আয়োজন করা হয় বিশ্ব ইজতেমা। যেখানে সারাবিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন বর্ণের মানুষের আগমন ঘটে। কথিত আছে বিশ্ব ইজতেমা কোথায় হবে এর জন্য সাতবার লটানি করা হয় আর প্রতিবারই বাংলাদেশের নাম উঠে এ বিশ্ব ইজতেমাকে মুসলিম উম্মাহর দ্বিতীয় মহাসম্মেলন হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। প্রতিবছর বাংলাদেশে টঙ্গীর তুরাগ নদীর পাড়ে ইজতেমার আয়োজন করা হয়। ইজতেমায় সমগ্র বাংলাদেশ থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষের আগমন ঘটে।

এছাড়াও সারা বিশ্বের জনসাধারণ মুসলিম আলেম-ওলামা ও তাবলিগের বড় বড় মুরাব্বীরা আগমন করেন। আল্লাহ আল্লাহ ধ্বণীতে মুখরিত হয় তুরাগ নদীর পাড়। সারাদিন ওলী আউলিয়া ওলামায়েকেরাম কুরআন -হাদীসের আলোকে বয়ান পেশ করেন।

আগত মুসল্লিদের কুরআন শিক্ষার লক্ষ্যে সূরা কিরাতের মস্কের আয়োজন করা হয়। মুসল্লিরা নিজেদেরকে সোপে দেয়, শোধরে নেয় তেলওয়াতের ভুল-ত্রুটি সমূহ। নবী সা. এর উত্তম আদর্শ ও শরিয়তের মাসআলা-মাসায়েল শিক্ষার লক্ষ্যে পাঠ করা হয় বিভিন্ন হাদীস গ্রন্থ ফাযায়েলে আমল ও ফাযায়েলে সাদাকাত বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। নবী সা. এর সুন্নাত সমূহ সম্পর্কে আগত মুসল্লিদের ধারণা দেওয়া হয়।

অল্প সময়ের মধ্যেই দৈনন্দিন জীবনের বিশেষ বিশেষ সুন্নাত সমূহ বিশেষ গুরুত্বের সহিত শিক্ষা দেওয়া হয়। নবী সা. এর সুন্নাত তরীকা অনুযায়ী নামায শিক্ষা দেওয়া হয়। এছাড়া অজু-গোসলসহ দৈনন্দিন কাজে বিভিন্নভাবে এক অপরে সহযোগিতা করেন। তাদের মাঝে পরিলক্ষিত হয় মুসলিম ভ্রাতৃত্বের এক অভূতপূর্ব নিদর্শন। খাবারের ক্ষেত্রে মুসল্লিদের মূলনীতি হলো “নিজে কম খাই, অপরকে বেশী খাওয়াই”।

আর অন্যান্য কাজে ইসলামের যে সুমহান আদর্শ নিজে কষ্ট করলেও অপর মুসলমান ভাইকে কষ্ট না দেওয়া। ভালোবাসা- ভ্রাতৃত্ব ও সম্মান-স্নেহের এক অনন্য নজীর স্থাপন হয় এই বিশ্ব ইজতেমায়। বিশেষত জুমার দিনে প্রায় এক কোটি মানুষের সমাগম ঘটবে। হয়ত বাংলাদেশের এই জুমার নামাজই সারা বিশ্বের সবচেয়ে দ্বিতীয় বৃহৎ জুমার জামাত। এই জুমার নামাজই সারাবিশ্বের মোড়ল, নাস্তিক ও ইসলাম বিদ্বেষীদের জানান দেয় মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের বজ্রধ্বনি।

তিন দিন ব্যাপী আয়োজিত এই ইজতেমার শেষ দিন দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে ইসলামের সুমহান বাণী পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে চল্লিশ দিন, একশত বিশ দিন বা এক বছরের জন্য মুসল্লিদের আল্লাহর রাস্তায় বের হওয়াকে “তাবলীগ” বলা হয়। সবশেষে আখেরী মুনাজাতের মাধ্যমে এই ইজতেমা শেষ হয়।

নিজেদের জীবনের ভুলের কথা স্মরণ করে ক্ষমা পাওয়ার আশায় আল্লাহর কাছে সেইদিন সকালে আকুতি পেশ করে বলেন, দয়াময় প্রভু অতীত জিবনের গোনাহের জন্য আমি লজ্জিত আমাকে আমার ভুলের জন্য হাশরের দিন শাস্তির সম্মুখীন করবেন না”।

প্রত্যেকে নতুন জীবন শুরুর এক দৃঢ় শপথ গ্রহণ করেন। রাসুলের আদর্শ বুকে ধারণ করে মৃত্যু পর্যন্ত এক শক্ত ইচ্ছা ব্যাক্ত করেন। ইজতেমা প্রতিটি উদ্ভ্রান্ত পথিককে দেয় সঠিক পথের দিশা। অন্ধকারে নিমজ্জিত প্রতিটি হৃদয় অনুভব করে আলোর রেখা। মু’মিন পান করে ইমানের অমীয় সুধা।

-আব্দুল্লাহ খান
শিক্ষার্থী-জামিয়াতুস সুন্নাহ শিবচর, মাদারীপুর

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *