আদম (আঃ)-মুসা (আঃ) বাদানুবাদ, বিজয়ী কে?

আদম (আঃ)-মুসা (আঃ) বাদানুবাদ, বিজয়ী কে?

হজরত মুসা (আ.)-এর দোয়া কবুল করে আল্লাহ তাআলা হজরত আদম (আ.) এর সঙ্গে তাঁকে স্বপ্নযোগে বা রূহানীভাবে সাক্ষাৎ করান। এসময় পরিচয়পর্ব শেষে দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়েছে বলে উল্লেখ রয়েছে গ্রহণযোগ্য হাদিসগুলোতে। এ ঘটনায় আদম আলাইহিস সালামের ভুলের কারণে সকল মানুষ জান্নাত থেকে বহিস্কৃত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন মুসা (আ.)। আলেমগণ বলেন, বহু কথনে সহিহ হাদিসগুলোতে এর বর্ণনা এসেছে। তাই ঘটনার সত্যতাকে অস্বীকার করার উপায় নেই। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ওই বাদানুবাদে হজরত আদম আলাইহিস সালাম জিতেছিলেন। (সূত্র: কাসাসুল আম্বিয়া, ইবনে কাসির)

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসূলুল্লাহ (স.) বলেন, হজরত আদম ও মুসা আলাইহিমুস সালামের কথাবার্তার মধ্যে বিরোধ হয়। মুসা (আ.) আদম আলাইহিস সালামকে বলেন, আপনি তো সেই ব্যক্তি, যার একটি ভুলের কারণে সকল মানুষ জান্নাত থেকে বহিস্কৃত হয়েছে। আপনি আমাদের স্থায়ী আরাম আয়েশ থেকে বঞ্চিত করেছেন। তখন হজরত আদম (আ.) বললেন, আপনি একজন মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি, আল্লাহ আপনাকে তাঁর রাসূল হিসেবে মনোনীত করেছেন এবং আপনার সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন। (এতো মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি হয়েও) আপনি এমন একটি ব্যাপারে আমাকে তিরস্কার করছেন, যে ব্যাপারটি আল্লাহ তাআলা আমার সৃষ্টির আগেই আমার ভাগ্যে লিখে রেখেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তাদের এ বাদানুবাদে হজরত আদম আলাইহিস সালাম জয়লাভ করেন। (বুখারি)

কিছু শব্দগত পার্থক্য ছাড়া একই হাদিস ইমাম তিরমিজি ও নাসায়ির বর্ণনাতেও এসেছে। হজরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) বর্ণিত অন্য হাদিসে রাসূলুল্লাহ (স.) বলেন, মুসা আলাইহিস সালাম আল্লাহ তা’আলার কাছে এই দোয়া করেছেন যে, হে আমার পরওয়ারদিগার! আমাকে একটু আদম আলাইহিস সালামকে দেখান। যিনি আমাদেরকে এবং তাঁর নিজেকে জান্নাত থেকে বের করিয়েছেন। তখন আল্লাহ তাআলা তাঁকে (হজরত আদমকে) দেখালেন। এ সাক্ষাতের সময় মুসা (আ.) আদম (আ.)-কে জিজ্ঞেস করলেন—

আপনিই কি সেই ব্যক্তি যার মধ্যে আল্লাহ তাআলা তাঁর রুহ মুবারক দান করেছেন, যাঁকে ফেরেশতাদের দিয়ে সিজদা করিয়েছেন এবং সকল বস্তুর নাম শিখিয়েছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। এরপর মুসা (আ.) তাঁকে বললেন, কী কারণে উৎসাহিত হয়েছিলেন যে, আপনি আমাদেরকে ও নিজেকে জান্নাত থেকে বের করেছেন? তখন হজরত আদম (আ.) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কে? তিনি বললেন, আমি মুসা। আদম (আ.) বললেন, আপনি কি বনি ইসরাইলের পয়গম্বর মুসা এবং আপনার সঙ্গে আল্লাহ তাআলা পর্দার আড়াল থেকে সরাসরি কথা বলেছেন? মুসা (আ.) উত্তরে বললেন, জি হ্যাঁ। তারপর হজরত আদম (আ.) বললেন, আপনি আমাকে এমন একটি কাজে দোষারোপ করেছেন, যা আল্লাহ তাআলা অনেক আগে থেকেই আমার ব্যাপারে লিখে রেখেছিলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, এ কথায় হজরত আদম (আ.) মুসা আলাইহিস সালামের উপর জয়ী হয়ে যান। (আবু দাউদ)

হজরত আদম (আ.) বিজয়ী হওয়ার কারণ কী? এর জবাবে মুফাসসিরগণ বলেন—

প্রথমত: মুসা (আ.) এমন কাজের জন্যে তিরস্কার করতে পারেন না, যেজন্যে আদম (আ.) তওবা করেছেন।

দ্বিতীয়ত: মুসা (আ.) নিজেও আল্লাহর আদেশ ছাড়াই এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছেন। তাই তাঁর তর্ক করাটাই প্রথম পরাজয়।

তৃতীয়ত: হজরত মুসার উত্তরে হজরত আদম (আ.) তাকদির বলতে তাঁর কৃতকর্মের দলিল পেশ করেননি, বরং তাঁর মসিবতের দলিল পেশ করেছেন। অর্থাৎ আমার তাকদিরে এই মসিবত লেখা ছিল বলেই ঘটনাটি ঘটেছে। যদি তিনি ভুল করাটাকেই তাকদির মনে করতেন, তাহলে তিনি ভুলের জন্যে আল্লাহ তাআলার দরবারে তওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা করতেন না।

হযরত আদম ও মুসা আলাইহিস সালামের মধ্যে বাদানুবাদ কোথায় সংঘটিত হয়েছিল এই ব্যাপারে বিভিন্ন মত পাওয়া যায়। যেমন—

১. হযরত আদম আলাইহিস সালামকে মুসা আলাইহিস সালামের জমানায় জীবিত করা হয়েছিল।

২. আলমে বরযখে।

৩. স্বপ্নযোগে। কারণ নবিদের স্বপ্ন সত্য।

৪. এখনও হয়নি, আখেরাতে হবে। নিশ্চিত অর্থ বোঝাতে হাদিসে বা অতীত শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে।

৫. তাদের মধ্যে রূহানিভাবে তর্ক হয়েছিল।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নবী-রাসুলের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে ঈমান সুদৃঢ় করার এবং সীরাতে রাসুলকে আঁকড়ে ধরার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *