সুরা কাহফ পবিত্র কোরআনের ১৮ নং সুরা। মক্কায় অবতীর্ণ এই সুরায় ১১০টি আয়াত রয়েছে। এই সুরায় সতর্ক করা, বোঝানো ও শিক্ষা দেওয়া-এ তিনটি কাজই একত্রে করা হয়েছে। সতর্ক করা হয়েছে মক্কার কাফিরদের। তাদের বলা হয়েছে, বনি ইসরাঈল ও অন্য জাতিদের পরিণাম থেকে শিক্ষা গ্রহণ করো। অন্যথায় তোমাদের ধ্বংস অনিবার্য।
মানুষের সৌভাগ্য-দুর্ভাগ্য ও কল্যাণ-অকল্যাণের ভিত্তি কী তা অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী পদ্ধতিতে বোঝানো হয়েছে। তাওহিদ, পরকাল, নয়ত ও কোরআনের সত্যতার প্রমাণ পেশ করা হয়েছে। মক্কার কাফিরদের পক্ষ থেকে এই মৌলিক সত্যগুলোর ব্যাপারে যেসব সন্দেহ-সংশয় করা হয়েছিল, সেগুলো দূর করা হয়েছে।
শিক্ষা দেওয়ার পর্যায়ে নৈতিকতা, সভ্যতা ও সংস্কৃতির মূলনীতি বর্ণনা করা হয়েছে। এসব কথার সঙ্গে সঙ্গে সমস্যা ও সংকটের প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে সুদৃঢ়ভাবে নিজের অবস্থানের ওপর টিকে থাকার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। কাফিরদের জুলুম, নিপীড়ন, লাগাতার মিথ্যাচার ও মিথ্যা দোষারোপের বিপরীতে ধৈর্য ধারণ করতে বলা হয়েছে।
আল্লাহর রহমত বর্ষণ : হাদিসে সুরা কাহফের বিশেষ ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। তা তিলাওয়াত করলে মহান আল্লাহর বিশেষ রহমত অবতীর্ণ হয়। বারা বিন আজিব রা. বর্ণনা করেছেন, এক ব্যক্তি (নামাজে) সুরা কাহফ তিলাওয়াত করছিল। তখন বাড়ির একটি চতুষ্পদ জন্তু লাফাতে শুরু করে। অতঃপর সে সালাম বলল। তখন কুয়াশা বা একখণ্ড মেঘ তাকে আবৃত রাখে। বারা বিন আজিব রা. বর্ণনা করেছেন যে সে বিষয়টি রাসুল সা.- এর কাছে বর্ণনা করেন। তিনি তাঁকে বলেন, ‘হে অমুক, তুমি সুরাটি তিলাওয়াত করো। কারণ এটি আল্লাহর রহমত বা প্রশান্তি, যা কোরআন তিলাওয়াতের কারণে অবতীর্ণ হয়েছিল।’ (বুখারি, হাদিস : ৩৬১৪; মুসলিম, হাদিস : ৭৯৫ )
আকাশ থেকে ভূপৃষ্ঠ পর্যন্ত আলোকিত : বিশেষ করে জুমার দিন এই সুরা তিলাওয়াতের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। হাদিসের বর্ণনা অনুসারে জুমাবার সপ্তাহের শ্রেষ্ঠতর দিন। সুরা কাহফ তিলাওয়াত এই দিনের অন্যতম আমল। মুআজ রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সা. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সুরা কাহফের শুরু ও শেষ তিলাওয়াত করবে তার পায়ের নিচ থেকে মাথা পর্যন্ত নূর প্রজ্জ্বলিত হবে। আর যে ব্যক্তি পুরো সুরা তিলাওয়াত করবে তার জন্য আসমান থেকে জমিন পর্যন্ত নূর প্রজ্জ্বলিত হবে।’ (মুসনাদে আহমদ : ৪৩৯/৩)
কিয়ামতের দিন এই সুরা তার পাঠকারীকে আলোকিত করবে। ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেছেন, “যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহফ পড়বে, তার পায়ের নিচ থেকে আসমান পর্যন্ত নুর প্রজ্জ্বলিত হবে এবং কিয়ামতের দিন তার জন্য উজ্জ্বল হবে। আর দুই জুমার মধ্যবর্তী সব গুনাহ ক্ষমা করা হবে।’ (তাফসিরে ইবনে কাসির : ৬/৩৯৮)
পুরো সপ্তাহ ব্যাপী নুর : কেউ প্রতি জুমায় এই সুরা তিলাওয়াত করলে এক জুমা থেকে অন্য জুমার মধ্যবর্তী সময় তার জন্য নুর প্রজ্জ্বলিত করে রাখা হয়। আবু সাইদ খুদরি রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সা. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহফ তিলাওয়াত করবে, তার জন্য দুই জুমা পর্যন্ত নূর প্রজ্জ্বলিত হবে।’ (সুনানে দারিমি, হাদিস : ৩৪০৭)
সুরা কাহাফ পাঠে দাজ্জাল থেকে সুরক্ষা : এই সুরা পাঠ করার মাধ্যমে দাজ্জালের ফেতনা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। আবু দারদা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সা. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সুরা কাহফের প্রথম ১০ আয়াত মুখস্থ করবে সে দাজ্জালের ফিতনা থেকে রক্ষা পাবে।’ (মুসলিম, হাদিস : ৮০৯)
তাই পারলে পুরো সুরা মুখস্থ করা উত্তম। নতুবা কমপক্ষে হাদিসে বর্ণিত বিশেষ আয়াতগুলো মুখস্থ করা যেতে পারে। অন্য হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি সুরা কাহফের শেষ ১০ আয়াত পড়বে সে দাজ্জালের ফিতনা থেকে রক্ষা পাবে।’ (মুসনাদে আহমদ, ৪৪৬/৬) আরেক বর্ণনায় এসেছে, ‘যে ব্যক্তি সুরা কাহফের ১০ আয়াত পড়বে সে দাজ্জালের ফিতনা থেকে রক্ষা পাবে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৮৮৬)