‘নারায়ে তাকবীর’ স্লোগানকে বিতর্কিত বলায় প্রতিবাদের ঝড়

‘নারায়ে তাকবীর’ স্লোগানকে বিতর্কিত বলায় প্রতিবাদের ঝড়

৯২ ভাগ মুসলমানের দেশে ‘নারায়ে তাকবীর’ স্লোগানকে বিতর্কিত বলায় প্রতিবাদের ঝড় বইছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। চট্টগ্রামে বিএনপির বিভাগীয় মহাসমাবেশে একজন বক্তা এই স্লোগান দেন। এসময় নেতাকর্মীদের উচ্ছ্বসিত আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয় সমাবেশ স্থল।

হুম্মাম কাদের চৌধুরীর এই স্লোগানকে বিতর্কিত বলে প্রচার করে কিছু ইসলামবিদ্বেষী গণমাধ্যম। এমনকি নারায়ে তাকবীর স্লোগান নিয়ে বিএনপির চট্টগ্রামের কিছু স্থানীয় নেতাকেও গোস্সা করতে দেখা যায়। নারায়ে তাকবীর’ স্লোগানকে সমর্থন না জানিয়ে উল্টো গোস্সা করায় বিএনপির এসব নেতাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভে তোলপাড় চলছে ফেসবুকে। অন্যদিকে, স্লোগানকে সমর্থন জানিয়ে তাকবীরের ধ্বনিতে ভরপুর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম।

সম্প্রতি দেশের ১০ বিভাগীয় শহরে মহাসমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। প্রথম সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় ১২ অক্টোবার চট্টগ্রামে। সমাবেশে হুম্মাম কাদের চৌধুরী বক্তৃতায় নারায়ে তাকবীর’ স্লোগান দেন। ওই স্লোগানে উপস্থিত লাখো জনতা উচ্ছসিতভাবে ‘আল্লাহু আকবর’ স্লোগানের মাধ্যমে জবাব দেন।

এই নারায়ে তাকবীর‘ স্লোগান নিয়ে বিএনপির দু’তিনজন তথাকথিত প্রগতিশীল নেতা বলেছেন, ‘ওই স্লোগান বক্তার নিজের ব্যক্তিগত, এটা দলের স্লোগান নয়।’ প্রশ্ন হচ্ছে- ওই স্লোগান নিয়ে এতো বিতর্ক কেন?

এনিয়ে জৈষ্ঠ্য সাংবাদিক, কলামিস্ট ও গবেষক মেহেদী হাসান পলাশ ফেসবুকে এক তথ্যবহুল পোস্টে লিখেছেন, “সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরী বা হুম্মাম কাদের চৌধুরী আমার আলোচ্য বিষয় নয়। কিন্তু বাংলাদেশের মিডিয়ার নারায়ে তাকবীর- আল্লাহু আকবর‘ শ্লোগান নিয়ে চুলকানি দেখে আমি বিস্মিত হইনি। কিন্তু বিস্মিত হয়েছি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর অনুশোচনা অথবা অসহায় আত্মসমর্পন দেখে।

নারায়ে তাকবীর- আল্লাহু আকবর’ বাঙালি মুসলমানের হাজার বছরের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অংশ। ইদানিং কিছু ওলামা এর পরিবর্তন করে লিল্লাহি তাকবীর’ শব্দটি ব্যবহার করে আসছে। কিন্তু শৈশব থেকে দেখে আসছি বাঙালি মুসলমানেরা যেকোনো বিজয়, আনন্দ, খুশীর খবর, দলবদ্ধ কাজে, আনন্দ মিছিলে নারায়ে তাকবীর ধ্বনী উচ্চারণ করা হয়। এমনকি অনেক মুক্তিযোদ্ধাদের মুখে শুনেছি, মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বিজয় লাভের পর প্রথমেই নারায়ে তাকবীর- আল্লাহু আকবর’ বলে উল্লাস প্রকাশ করেছে। এরপর জয় বাংলা বলেছেন। এই নারায় তাকবীর স্লোগান ইখতিয়ার উদ্দিন মোহামম্মদ বিন বখতিয়ার খলিল দিয়েছিলেন বঙ্গ বিজয়ের পর, হযরত শাহজালাল রহমাতুল্লাহ আলাইহি দিয়েছিলেন সিলেট বিজয়ের পর, সিপাহী বিপ্লবে এই নারায়ে তাকবীর স্লোগান ব্রিটিশ সরকারের বুকে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছিল। নবাব সলিমুল্লাহ, শেরে বাংলা, সোহরাওয়ার্দী হয়ে মাওলানা ভাসানী কন্ঠে এই স্লোগান বাংলাদেশের প্রান্তরে প্রান্তরে ধ্বনিত হয়েছিল। শেখ মুজিবের কন্ঠেও বহুবার শোনা গিয়েছিল এই স্লোগান। আর প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান রাজনীতি শুরুই করেছিলেন এই স্লোগানের।

যেসব মিডিয়া ধর্ম নিরপেক্ষার নামে বাংলাদেশে ব্রাহ্মণ্যবাদী, পৌরাণিক, উপনিষদীয় ও মনুসংহিতার সংস্কৃতির প্রচলন করতে চায় বাঙালি সংস্কৃতির মিষ্ট মোড়কে তাদের ‘নারায়ে তাকবীর’ ধ্বনীতে ব্যাপক চুলকানী থাকতেই পারে। কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা কবিতায় ‘তলোয়ার’ শব্দ ব্যবহার করলে তা নিয়েও এদের পূর্বসূরীদের গাত্রদাহ হয়েছিল। এমনকি তিনি ‘মা ভৈ, মা ভৈ(মা ভৈরবী/কালী) বা জয় মা বলে তরী ভাসানোর পরও খেয়াপারের তরণী কবিতায় তিনি যখন লিখলেন, “দাঁড়ি মুখে সারী গান লা শারিক আল্লাহ” তখন এদের চুলকানি রীতিমত ক্ষতের সৃষ্টি করেছিল। এ যুগে ‘নারায়ে তাকবীর’ যে তাদের গাত্রে চোতরা বা বিছুটি পাতার মতো প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করবে তাতে অস্বাভাবিকতার কিছু নেই।

কিন্তু আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর ক্লারিফিকেশন- অসহায় আত্মসমর্পন নাকি রাজনৈতিক আদর্শচ্যুতি বা পরিবর্তন বুঝতে কষ্ট হয়। কেননা, তিনি যে দল করেন সেই দলের প্রতিষ্ঠাতা রাজনীতি শুরু করেছেন, ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম’ কুরআনের আয়াত উচ্চারণের মাধ্যমে। শুধু তাই নয়, তিনি এ আয়াত বা বাক্যকে বাংলাদেশের সংবিধানের শুরুতে সংযোজন করেছিলেন। এখানেই শেষ নয়, তিনি সংবিধানে আরো সংযোজন করেছিলেন, ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস হইবে রাষ্ট্র পরিচালনার যাবতীয় কার্যাবলীয় মূল ভিত্তি’। সংবিধানে তিনি আরো সংযোজন করেছিলেন, অন্য যেকোনো আইন যদি এই ধারার সাথে সাংঘর্ষিক হয় তা বাতিল হবে। অর্থাৎ আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাসকে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্র পরিচালনার মূল ভিত্তি বলে সংবিধানে স্থাপন করেছিলেন।

শুধু তাই নয়, তিনি যে দল করেন, সেই দলের মূল ভিত্তি যে ১৯ দফা তার দ্বিতীয় দফার শুরুতে শাসনতন্ত্রের যে চারটি মূলনীতির কথা বলা হয়েছে তার প্রথমেই তিনি, সর্বশক্তিমান আল্লাহর প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস ও আস্থা বাক্যটি যুক্ত করেছেন। বিএনপিতে বিপুল পরিমাণ অমুসলিম নেতাকর্মী রয়েছে জেনেও জিয়াউর রহমান সংবিধান ও ১৯ দফায় সৃষ্টিকর্তা ও করুণাময় শব্দগুলো ব্যবহার করেননি। সেই দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যের নারায়ে তাকবীর ধ্বনী নিয়ে অস্বস্তির বিষয়টি বোধগম্য নয়। প্রশ্ন জাগে, হুম্মাম কাদেরের বক্তব্য যদি ব্যক্তিগত হয়, তাহলে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বক্তব্য কী? ব্যক্তিগত, নাকি দলীয়? দলীয় হলে সেটা স্পষ্টতই বিএনপির রাজনৈতিক আদর্শিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত বহন করে। বিএনপি কি নারায়ে তাকবীর স্লোগানের পরিবর্তে মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের সংস্কৃতির দিকে ঝুঁকছে? বিএনপির সাধারণ নেতাকর্মীরা কী বলেন?”

সাংবাদিক আনিছুর রহমান লিখেছেন, “ডিবিসি টিভি রিপোর্ট করেছে, চট্টগ্রামে হুম্মাম কাদেরের ‘নারায়ে তাকবির আল্লাহু আকবার’ স্লোগানে বিএনপির সমাবেশ প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে ৷ কারণ রাজনীতিতে ধর্মকে ব্যবহার করা হয়েছে।অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের পোস্টারের ওপরে যে ‘আল্লাহ সর্বশক্তিমান’ লেখা হয় তখন ধর্মকে ব্যবহার করা হয় না? পোস্টার প্রশ্নবিদ্ধ হয় না? অথচ, বঙ্গবন্ধু তার প্রতিটি বক্তব্যে তিনি আল্লাহর নাম নিয়েছেন, ইন শা আল্লাহ বলেছেন।

এদিকে, ডিবিসি টিভির সেই রিপোর্টের নিচে ৪১ হাজার লোক কমেন্ট করেছে। শতভাগ কমেন্টই নিউজের বিরুদ্ধে। সবাই এই রিপোর্টের প্রতিবাদ জানিয়েছে। ধিক্কার জানিয়েছে। আমি মনে করি, সাংবাদিকতা করতে হবে মানুষের পালস বুঝে। ডিবিসি টিভি আল্লাহু আকবার স্লোগানের বিরুদ্ধে রিপোর্ট করে তারা দেশের মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতেই আঘাত দিয়েছে। এতে আর কিছু হয়নি। এসব বিষয়ে তাদের আরো সতর্ক হওয়া উচিত বলে মনে করি। সেই নিউজের ৪১ হাজার কমেন্ট থেকে তাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত।

মোঃ আলামিন নামে একজন পাঠক লিখেছেন, নারায়ে তাকবির আল্লাহু আকবর, স্লোগান শুনলে যাদের হৃদয়ের মধ্যে কাপোন ধরে মনে করবা তুমি মুনাফেক!”নারায়ে তাকবীর” আল্লাহু আকবার” স্লোগানে কোন মুসলমানের আপত্তি থাকার কথা নয়, এই স্লোগানে যে কোন মুসলিম শামিল হতে পারে, একমাত্র ভয় পাবে, ইবলিশ, মুনাফেক, কাফির।”

আবু হানিফ লিখেছেন, “যখন বড় বড় নেতার নাম উচ্চারিত করে স্লোগান দেওয়া হয় তখন তখন কিছু সম্প্রদায় আনন্দে উল্লাসিত হয়ে উঠে। আর তাদের সামনে যখন আল্লাহর বড়ত্বের জানান দিয়ে আল্লাহু আকবরের স্লোগান দেওয়া হয়, তখন তাদের অন্তর সংকুচিত হয়ে যায়। এদের সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা বলেন, “যখন একক সত্ত্বা হিসেবে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা হয়, তখন যারা পরকালে বিশ্বাস করে না, তাদের অন্তর সংকুচিত হয়ে যায়; আর যখন আল্লাহ ব্যতীত অন্য উপাস্যদের নাম উচ্চারণ করা হয়, তখন তারা আনন্দে উল্লসিত হয়ে উঠে।” (৩৯:৪৫ ) যেসব সম্প্রদায় আল্লাহ আকবর ধ্বনি নিয়ে আপত্তি তুলে, তারা মুমিন নাকি কাফের আল্লাহর এই আয়াতই তার জ্বলন্ত প্রমাণ।

ফয়জুল ইসলাম লিখেছেন, “নারায়ে তাকবীর এটা তো মুসলমানদের ইমানের ধ্বনী। আর এটা কে যারা বিতর্কিত করতে চায় মনে রাখতে হবে এরা ইসলাম ও মুসলমানের শত্রু, তারা এদেশকে হিন্দুত্ববাদি রাষ্ট্র বানাতে চায়!!”

সম্মানিত পাঠক, আমাদের ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেইজে আপনাকে স্বাগতম

Please Follow US – Halaltune.com | Facebook 

Please Subscribe US – Halal Tune Blog | Youtube

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *