পরিপূর্ণ দ্বীনের ওপর চলার শক্তি অর্জনের জন্যই এই মেহনত

পরিপূর্ণ দ্বীনের ওপর চলার শক্তি অর্জনের জন্যই এই মেহনত

হামদ ও সালাতের পর, প্রত্যেক আমলেরই শুরু এবং শেষ থাকে। যেমন নামাজ তাকবীরের দ্বারা শুরু এবং সালাম দ্বারা শেষ হয়। অনুরূপ হজ ইহরাম দ্বারা শুরু হয় এবং মাথা মুণ্ডানো দ্বারা শেষ হয়।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সকল ব্যস্ততা থেকে ফারেগ করে জমায়েত করেছেন। এই জমায়েত হওয়ার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, সকলের জীবনে যেন দ্বীন আসে। দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জগতের সফলতা আল্লাহ তাআলা দ্বীনের মধ্যেই রেখেছেন। যদি কারো মধ্যে দ্বীন আসে, সে গরিব হোক অথবা ধনী, তার অন্তরে আল্লাহ তাআলা শান্তি দান করেন। সকল মানুষও তাকে ভালবাসে।

দুনিয়া পরিবর্তনশীল। যেমন কখনো সুস্থতা থাকে, আবার কখনো অসুস্থতা ও পেরেশানি আসে। এসব কিছুর সমাধান আল্লাহ তায়ালা একমাত্র দ্বীনের মধ্যেই রেখেছেন। আর সবচেয়ে বড় নেয়ামত হলো আফিয়াত ( সুস্থতা)। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা আল্লাহর কাছে আফিয়াত চাও এবং দ্বীনের উপর অটল থাকার জন্য কামনা করো। যার জীবনে পূর্ণ দ্বীন আসবে, যে পূর্ণ দ্বীনের ছায়াতলে আসতে পারবে তার কাছে জীবন মৃত্যু উভয়টা সমান।

যে ব্যক্তি পুলসিরাত পার হয়ে জান্নাতে যেতে পারবে, সে-ই প্রকৃত সফল। আর দুনিয়াটা হলো পুরোটাই ধোঁকা। জান্নাতে মানুষ সর্বদা যুবক অবস্থায় থাকবে। সেখানে সকলের মনের আশা পূরণ হবে আল্লাহ তাআলা তাদের উপর রাজি ও সন্তুষ্ট থাকবেন আর জান্নাতীরাও আল্লাহ তায়ালার উপর রাজি থাকবে।

মানুষের মধ্যে পরিপূর্ণ দ্বীন কিভাবে আসবে? মানুষের মধ্যে পরিপূর্ণ দ্বীন আসবে, যখন তার মধ্যে দ্বীন অর্জন করার মত শক্তি হাসিল হবে। এখানে পরিপূর্ণ দ্বীনের অর্থ হলো, আল্লাহ তাআলা কিছু কাজ করতে নিষেধ করেছেন আর কিছু কাজ করতে আদেশ করেছেন। উভয় কাজ তার সঠিক পদ্ধতি অনুযায়ী মেনে চলা। এটাই পরিপূর্ণ দ্বীন।

আমরা এখানে যে দাওয়াতের নিয়তে এসেছি এর মাধ্যমে পরিপূর্ণ দ্বীনের উপর চলার শক্তি হাসিল হবে। এই শক্তি অর্জনের জন্যই এই মেহনত।

নবীদের আগমনের দরজা বন্ধ। কিন্তু কেয়ামত পর্যন্ত মানুষ আসবে। কেয়ামত পর্যন্ত আগত মানুষকে ধোঁকা দেয়ার জন্যই শয়তান আল্লাহ তাআলার কাছে কিয়ামত পর্যন্ত হায়াত চেয়ে নিয়েছিলো। সুতরাং শয়তান তার কাজ করে যাবে। আর এখন যেহেতু নবীদের দরজা বন্ধ, কোন নবী আসবেন না সেহেতু শয়তানের বিপক্ষে হেদায়েতের কাজ আমাদেরই করে যেতে হবে। আমাদের হকের মেহনত তথা ইসলামের দাওয়াত সর্বদা বহাল রাখতে হবে।

এভাবে চলতে চলতে যখন আমরা পরিপূর্ণ দ্বীনের উপর চলে আসবো, দ্বীনের প্রতিটা কাজ সঠিক নিয়মে করতে থাকবো তখন আল্লাহ তায়ালার সাহায্য আসবে। আর আল্লাহ তায়ালার সাহায্য আসা মানে সমস্ত সমস্যার সমাধান হয়ে যাওয়া। অর্থাৎ সর্বপ্রথম আমাদের মাঝে হেদায়েত আসবে। দ্বিতীয়ত রিজিকের কোন সমস্যা থাকবে না। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে এমন অবস্থায় নিয়ে যাবেন, যেখানে জীবিত থাকা না থাকা উভয়টাই সমান। সবকিছুই একটা নেয়ামত মনে হবে।

সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু এই কাজটা খুব ভালোভাবে করতে পেরেছিলেন। তারা একদিকে নিজেদের মধ্যে পূর্ণ দ্বীন নিয়ে আসছেন এবং পৃথিবীর সকল মানুষের চিন্তা নিজেদের কাঁধে নিয়ে তাদেরকে দাওয়াত দিয়েছেন। যার পরে আল্লাহ তাআলা তাদেরকে এমন নিরাপত্তা দান করেছেন, এমন কোন শক্তি, এমন কোন সাম্রাজ্য অবশিষ্ট ছিল না যারা তাদের দিকে রক্ত-চোখে তাকাতে পারে।

দ্বীনের সমস্ত কাজ আমরা এখানে শিখর এবং সবকিছুকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যাব। নিজের ঘরেও দ্বীনের সর্বপ্রকার আমল চালু করবো। ঘরের সম্পর্ক মসজিদের সাথে হবে। মসজিদে ঈমানদার লোকেরা আছে। তাদের মাধ্যমে বরকত আসতে থাকবে ।

নবীওয়ালা আমলের মধ্যে সবচেয়ে বড় আমল হল, ১) দাওয়াত ইলাল্লাহ। আল্লাহ তায়ালার পথে মানুষকে দাওয়াত দেওয়া। আল্লাহতালার আজমত মহাব্বত অন্তরে ধারণ করা। মহব্বতের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে বরকত আসবে। ২) আমাদের অন্তরে আল্লাহ তায়ালার ভয় সৃষ্টি করা। আল্লাহ তায়ালা অসন্তুষ্ট হয়ে গেলেন না তো?! যখনই এই ভয় আমাদের মধ্যে আসবে তখন সর্বপ্রকার নাফরমানী থেকে আমরা মুক্তি পাবো। আর যে ব্যক্তি নাফরমানি থেকে মুক্তি পাবে সে অনেক বড় আবেদ হয়ে যাবে। ৩) আমাদের জীবন গড়ার সম্পর্ক কোন ডিগ্রির সাথে নয়। টাকা-পয়সা এবং কোন রাজত্ব বা সাম্রাজ্যের সাথেই নয়। আমাদের জীবন গড়ার সম্পর্ক একমাত্র আল্লাহ তায়ালার সাথে। আল্লাহ তায়ালাই আমাদের জীবন গড়তে পারেন। তাই রোনাজারি করতে হলে, কিছু চাইতে হলে আল্লাহতালার কাছেই চাবো।

আমরা এখানে তিনদিন থাকবো। তিনদিনে দুনিয়াকে ছুঁড়ে ফেলে একমাত্র আল্লাহতালা সন্তুষ্টির জন্যই এখানে রাত্রি যাপন করব। আল্লাহতালা থেকে নেয়ার একমাত্র মাধ্যম হলো ইবাদত। আল্লাহ তাআলা এর মধ্যেই আমাদের সকল সমস্যার সমাধান রেখেছেন। যেমন যেমন ভয় পেলে সালাতুল খওফ, সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণে সালাতুল কুসুফ ও সালাতুল খুসুফ পড়া হয়ে থাকে।

আমরা আমাদের মধ্যে সফলতা আনতে পারি। দ্বীনের প্রতিটি কাজ ভালোভাবে আনযাম দিতে পারি যেসব বিষয়ের মাধ্যমে সেগুলো হলো,

১) দাওয়াতের সাথে সাথে নিজের এবাদত ভাল ও সুন্দর করার মেহনত করা।
২) ফাজায়েলে আমলের তালিমে বসা। মানুষ এই কাজটাই করার জন্য আগ্রহী হয়, যে কাজটার সে ফজিলত ও লাভ বুঝতে পারে। ফজিলতের দ্বারা মানুষের ইয়াকিন হাসিল হয়।
৩) কোরআন শিখা ও শিখানো। প্রত্যেক মুসলমানের জন্য কোরআন শেখা উচিত। এর মধ্যে প্রতিটি ব্যক্তির সকল প্রকার হেদায়েত আছে। প্রতিটা মুসলমানের উচিত, বছরে দুইবার হলেও কোরআন শরীফ খতম দেওয়া। এটা কোরআন শরীফের হক। হাদীস শরীফে আছে, উত্তম হলো ঐ ব্যক্তি, যে কোরআন শরীফ শেখে এবং শিক্ষা দেয়।
৪) বেশি বেশি দরুদ শরীফ পাঠ করা। কেননা বেশি বেশি দরুদ শরীফ পাঠের মাধ্যমে কেয়ামতের দিন মানুষ উচ্চ মর্যাদার অধিকারী হবে।
৫) বেশি বেশি দোয়ার গুরুত্ব দেয়া।
৬) অপরের খেদমত করা। কেননা খেদমতের দ্বারা মুহাব্বত বাড়ে। যেমন মা তার বাচ্চার সদা খেদমত করার কারণে বাবার চেয়েও সন্তানের কাছে অধিক বেশি প্রিয় হয়ে ওঠে।
৬) অন্যের উপর রহম করা। কেননা আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, যে অন্যের উপর রহম করে আমি তার উপর রহম করি।
৭) অন্যের জন্য সব কিছু প্রশস্ত করে দেয়া।
৮) কুরবানী করা। এর দ্বারা আল্লাহ তাআলার নৈকট্য হাসিল হয়। হাদীসে কুদসিতে আছে, আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, আমার জন্য ওই ব্যক্তির উপর রহম করা ওয়াজিব হয়ে যায়, যে আমার জন্য অন্যের সাথে সাক্ষাৎ করে।
৯) অন্যকে বেশি বেশি ইসলামের পথে দাওয়াত দেওয়া। আমার কথায় কোন একজনও যদি ইসলামের পথে বের হয়ে যায়, ইসলামের হেদায়েত তার অন্তরে আসে তাহলে কিয়ামত পর্যন্ত ওই ব্যক্তি এবং ওই ব্যক্তি দ্বারা যত মানুষ আরো হেদায়েত প্রাপ্ত হবে তার প্রতিটি সাওয়াবের একটি অংশ আমি নিজেও পাবো।

আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওফিক দান করুন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *