বিপদে যে দোয়াটি বেশি বেশি পড়বেন!

বিপদে যে দোয়াটি বেশি বেশি পড়বেন!

যে কোনো প্রয়োজনে কোনো মুসলিম যদি দোয়া ইউনুস পড়ে, আল্লাহ তার দোয়া কবুল করবেন। (তিরমিযী, সহিহুল জামি : ৩৩৮৩)

অন্য হাদিস অনুযায়ী, দোয়া ইউনুস পড়লে আল্লাহ তার দুশ্চিন্তা দূর করে দেবেন। উচ্চারণ : লা ইলা-হা ইল্লা-আনতা, সুবহা’-নাকা ইন্নি কুনতু মিনায়-যোয়ালিমিন। অর্থ: (হে আল্লাহ) তুমি ছাড়া আর কোনো মাবুদ নাই, তুমি পবিত্র ও মহান! নিশ্চয়ই আমি জালেমদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা আল-আম্বিয়া : ৮৭)

দু’আ কবুলের জন্য একটি সহজ আমল করা যায়, যে আমলটি করে সফল হয়েছিলেন আল্লাহর নবি ইউনুস (আলাইহিস সালাম)।

রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ইউনুস (আ.) মাছের পেটে যে দু’আ করেছিলেন, সে দু’আ দ্বারা কোনো মুসলিম ব্যক্তি যদি কিছু চায়, তবে আল্লাহ্ অবশ্যই তার চাওয়ায় সাড়া দেবেন। দু’আটি হলো-

                               ا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحٰنَكَ إِنِّيْ كُنْتُ مِنَ الظّالِمِيْنَ

লা ইলাহা ইল্লা আংতা সুবহানাকা ইন্নি কুংতু মিনায যোয়ালিমিন) অর্থ: (হে আল্লাহ!) আপনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, আপনি মহিমান্বিত; নিশ্চয়ই আমি জালিমদের অন্তর্ভুক্ত। [তিরমিযি, আস-সুনান: ৩৫০৫, মুসতাদরাকে হাকিম ও মাজমাউয যাওয়াইদেও এসেছে হাদিসটি। এটি বিশুদ্ধ হাদিস]

এক হাদিসে এসেছে, এই দু’আ বা যিকিরটি আল্লাহর ইসমে আযম, যা দিয়ে ডাকলে আল্লাহ্ সাড়া দেন। [হাকিম, আল- মুসতাদরাক: ১/৬৮৫] প্রথমে একটু ক্লিয়ার করে নেওয়া যাক। অনেকে ভাবতে পারেন, ‘এটি দু’আ কীভাবে হলো? এই বাক্যটি দিয়ে তো কিছু চাওয়া হচ্ছে না! এটি তো যিকির!

জেনে রাখবেন, হাদিসে বর্ণিত বিভিন্ন যিকরও একধরনের দু’আ, যদিও সেগুলোতে কোনো কিছু না চাওয়া হয়। ইউনুস (আ.) যখন এই বাক্যটি পড়ছিলেন, তখন তাঁর মনে কি এটা ছিলো না যে, হে আমার রব! আমাকে এই কঠিন দুরবস্থা (মাছের পেট) থেকে মুক্তির ব্যবস্থা করুন?

আপনি দু’আর সময় এই বাক্যটি বারবার বলতে থাকবেন, সাথে জিহ্বা নাড়িয়ে অথবা মনে মনে সেই কাঙ্ক্ষিত বিষয়টি আল্লাহর কাছে চাইতে থাকবেন। তবে, ফোকাস করবেন এই বাক্যটির অর্থের মর্মের দিকে।

এখানে আল্লাহর প্রশংসা এবং নিজের প্রতি নিন্দা আছে। আল্লাহ্ তা’আলা এটিই পছন্দ করেন যে, বান্দা নিজের ব্যাপারে নিজেকে তিরস্কার করুক আর আল্লাহর প্রশংসা করুক। কারণ প্রকৃতপক্ষেই আমরা তিরস্কারের উপযুক্ত আর আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তাআলা সমস্ত প্রশংসার যোগ্য। নিজের গুনাহগুলো মাথায় রেখে নিজেকে তুচ্ছজ্ঞান করতে করতে আল্লাহর কাছে চাইতে থাকবেন। বাক্যে নিজেকে ‘জালিম’ বলার দ্বারা বোঝানো হয়েছে, গুনাহের দ্বারা নিজের উপর জুলুম করাকে। জুলুম নিজের উপর করলেও ব্যক্তি তো জালিমই হয়।

সমুদ্রের কোনো বিরাট মাছ যদি কাউকে গিলে ফেলে, তবে তার মুক্তির কোনো উপায় থাকে না। এমন ভয়াবহ মুহূর্তে আল্লাহ্ ছাড়া কোনো সাহায্যকারী থাকতে পারে না।

চিন্তা করুন, নবি ইউনুস (আ.) এমন ভয়াবহ বিপদের সন্মুখীন হয়েছিলেন। তিনি হতাশ না হয়ে নিজের ভুল স্মরণ করে আল্লাহর কাছে দু’আ করতে থাকেন আর আল্লাহও তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে তাঁকে এই অন্ধকার জায়গা থেকে বের করে আনেন।

আমাদের বিপদ-আপদ নিশ্চয়ই নবি ইউনুস (আ.)-এর চেয়ে বড় নয়!? সুতরাং হতাশ না হয়ে পূর্ণ বিশ্বাসের সাথে দুআ করতে হবে। দু’আর আদব ও নিয়মগুলো অনুসরণ করে আল্লাহর কাছে নিজের অক্ষমতা তুলে ধরতে হবে। আল্লাহ্ তাঁর নবিকে হতাশ করেননি; আমাদেরকেও করবেন না।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *