মুখের ছবি নয়, ফিঙ্গারে জাতীয় পরিচয়পত্র চায় মহিলা আনজুমান

মুখের ছবি নয়, ফিঙ্গারে জাতীয় পরিচয়পত্র চায় মহিলা আনজুমান

মুখের ছবি নয়, জাতীয় পরিচয়পত্রে শুধু ফিঙ্গার পদ্ধতি রাখার দাবি জানিয়েছে মহিলা আনজুমান দরবার শরীফ রাজারবাগ । তারা বলছেন, মুখের ছবি নেওয়ার কারণে জাতীয় পরিচয়পত্রে (এনআইডি) আসতে আগ্রহী নয় অনেক নারী। কিন্তু এনআইডি ছাড়া একজন নাগরিক ২২ ধরনের রাষ্ট্রীয় সেবা নিতে পারেন না। তাই মুখের ছবি না নিয়ে শুধু ফিঙ্গার প্রিন্টের ভিত্তিতে পর্দানশিন নারীদের জন্য এনআইডি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক।

সোমবার (১৯ জুন) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সম্মেলনে এসব দাবি জানান মহিলা আনজুমানের মুখপাত্র শারমিন ইয়াসমিন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে একাধিক দাবি তুলে ধরা হয়। তারা বলেন, ‘পরিচয় নিবন্ধন আইন ২০১৩’-এ যেন এনআইডির জন্য মুখচ্ছবি বাধ্যতামূলক করা না হয়। শুধু এনআইডি নয়, রাষ্ট্রের সব ক্ষেত্রে যেমন অফিস-আদালত, কলকারখানা, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বা পরীক্ষার হলে অপরাধ, দুর্নীতি ও প্রক্সি রুখতে ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে শনাক্তকরণ/হাজিরা চালু করা, প্রয়োজনে কোনো নারীর চেহারা দেখাসহ কোনো সহযোগিতা যদি প্রয়োজন হয়, তবে পৃথক স্থানে নারী দিয়েই নারীর সহযোগিতার ব্যবস্থা করতে হবে।

মহিলা আনজুমানের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে: পর্দানশিন নারীদের রাষ্ট্রীয় নিবন্ধনে আসতে চাওয়া জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে ইতিবাচক শুধুমাত্র মুখচ্ছবি দিতে সম্মতি না দেওয়ায় এনআইডি বঞ্চিত হয়ে আছেন অসংখ্য পর্দানশিন নারী। যারা সরকারের নিবন্ধনের আওতার সম্পূর্ণ বাইরে। অথচ সরকারি ডাটাবেজে সব নাগরিকের নিবন্ধন থাকা জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু পর্দানশিন নারীরা ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে সরকারি নিবন্ধনের আওতায় আসতে ইচ্ছুক, তাই ছবি বাধ্যতামূলক না করে ফিঙ্গার প্রিন্ট ডাটা নিয়েই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচিত হবে তাদের সাদরে জাতীয় নিবন্ধনের অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া।

পরিচয় যাচাইয়ে ফিঙ্গার প্রিন্ট অনেক বেশি জননিরাপত্তাবান্ধব ও দুর্নীতিরোধক। বর্তমানে এনআইডিতে ব্যক্তির একটি মুখচ্ছবি থাকে, যার কার্যকারিতা ও নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ। প্রথমত, অধিকাংশ ক্ষেত্রে ছবির সঙ্গে বাস্তব চেহারার অনেক অমিল থাকে। ফলে ছবি দেখে যাচাইয়ে বেশ বেগ পেতে হয়। দ্বিতীয়ত, দুই ব্যক্তির চেহারার মিলকে কাজে লাগিয়ে একজনের এনআইডি অন্যজন ব্যবহার করে বহুবিধ অপরাধ করে। আবার মুখচ্ছবি দেখে যাচাই পদ্ধতিকে পুঁজি করে ক্ষণস্থায়ী, গলাকাটা ও ভুয়া এনআইডি ব্যবহারও বাড়ছে।

এসব কারণে বর্তমানে শুধুমাত্র ফিঙ্গার প্রিন্ট ব্যবহার করেই গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে এনআইডি নির্ভুলভাবে শনাক্ত করা হচ্ছে, যেখানে মুখচ্ছবির কোনো ব্যবহার নেই। যেমন-দ্বৈত ভোটার যাচাই, রোহিঙ্গা যাচাই, ইভিএমে ভোট দেওয়া, সিমকার্ড নিবন্ধন ইত্যাদি। অর্থাৎ ফিঙ্গার প্রিন্টের কার্যকারিতা ও নিরাপত্তা সর্বজন স্বীকৃত ও গ্রহণযোগ্য। এ কারণে শুধু জাতীয় পরিচয় শনাক্তকরণেই ফিঙ্গার প্রিন্টের ব্যবহার যথেষ্ট নয়, বরং রাষ্ট্রের সব সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ফিঙ্গার প্রিন্টের বহুল ব্যবহার চালু করা এখন সময়ের দাবি।

বিশেষ করে, একজনের হাজিরা অন্যজন দিয়ে দেওয়া, চেহারা মিল থাকায় পরীক্ষার হলে প্রক্সি দেওয়া, একজনের ত্রাণ অন্যজন চুরি করা, স্কুলে বাচ্চাদের দুপুরের খাবার আরেকজন খেয়ে নেওয়া, আসল ডাক্তারের সঙ্গে চেহারার মিলকে কাজে লাগিয়ে তার এমডিসি নম্বর ব্যবহার করে ভুয়া ডাক্তারি করার মতো বহুবিধ দুর্নীতি ও অপরাধ বর্তমানে অহরহ হচ্ছে। যা রুখতে একমাত্র সমাধান হচ্ছে ফিঙ্গার প্রিন্টের মাধ্যমে রিয়েল-টাইম শনাক্ত করা।

যেহেতু পর্দানশিন নারীরা সঠিক ফিঙ্গার প্রিন্ট পদ্ধতিই বেছে নিয়েছেন, তাই অযথা মুখচ্ছবিকে বাধ্যতামূলক করে তাদেরকে এনআইডি বঞ্চিত করে রাখার কোনো যৌক্তিক কারণ থাকতে পারে না।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *