যেসব ভুলের কারণে আমাদের দোয়া কবুল হয় না

যেসব ভুলের কারণে আমাদের দোয়া কবুল হয় না

দয়াময় আল্লাহর কাছে বান্দার হৃদয়ের আকুতি প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে দোয়া। অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগির ন্যায় দোয়াও একটি ইবাদত। আল্লাহর কাছে বান্দার দোয়ার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। হজরত রাসুলুল্লাহ সা. দোয়াকে শ্রেষ্ঠ ইবাদত বলে আখ্যায়িত করেছেন। হাকেম : দোয়ার বদৌলতে আগত বিপদ-আপদ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায় এবং অনাগত বিপদ দূরীভূত হয়। কিন্তু দোয়ায় বিভিন্ন ভুল-ভ্রান্তির কারণে কখনো দোয়া কবুল হয় না। যেমন

শিরকি উসিলা গ্রহণ
দোয়া হবে শুধুমাত্র আল্লাহর কাছে। দোয়ার মধ্যে মৃত ব্যক্তি, জিন, পাথর, গাছপালা, অথবা অন্যকোনো শিরকি উসিলা গ্রহণ করলে দোয়া কবুল হওয়ার পরিবর্তে সৎ আমল বিনষ্ট হয়ে যায়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘অথচ (হে নবী!) নিশ্চিতভাবে তোমার প্রতি ও তোমার পূর্ববর্তী (নবীদের) প্রতি প্রত্যাদেশ করা হয়েছিল, যদি তুমি শিরক কর, তাহলে অবশ্যই তোমার সব আমল বিফলে যাবে এবং তুমি অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। সুরা যুমার : ৬৫

সুতরাং উসিলা গ্রহণের ক্ষেত্রে বৈধ উসিলা গ্রহণ করতে হবে। যেমন ক. আল্লাহর নাম ও গুণাবলির উসিলা। খ. নিজের নেক আমলসমূহের উসিলা। গ. জীবিত কোনো পরহেজগার ব্যক্তির দোয়ার উসিলা।

দোয়ায় বিদআতি মাধ্যম গ্রহণ
দোয়া নবী কারিম (সা.)-এর দেখানো পদ্ধতি অনুযায়ী থেকে হবে। এক্ষেত্রে অন্যকোনো মাধ্যম গ্রহণ করলে তা বিদআত হবে। আর বিদআত কুফরের অগ্রদূত।

নিরাশ হয়ে দোয়া
এমন মানুষ আছে যারা দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হলে চিন্তা করে, সে আর সুস্থ হবে না। এই বিপদ থেকে রক্ষা পাবে না। এরপর দোয়া ছেড়ে দেয়, আল্লাহর স্মরণ ত্যাগ করে এবং নিরাশ হয়ে যায়। খুব কমই ধারণা রাখে, এই অবস্থা পরিবর্তন হবে। এমন পরিস্থিতিতে শয়তান তাকে নিরাশ করে দেয়। মহান আল্লাহর প্রতি ক্রমশ তাকে আস্থাহীন করে তোলে। অথচ একমাত্র আল্লাহই পারেন অসুস্থকে সুস্থ করতে এবং বন্ধ্যাকে সন্তান দিতে। সুতরাং আশা ছেড়ে না দিয়ে আল্লাহকে ডাকতে হবে। যেমনটি হজরত জাকারিয়া (আ.) করেছিলেন। তিনি জীবনের পড়ন্ত বেলায় আল্লাহর কাছে দোয়া করেছিলেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমাকে তোমার পক্ষ থেকে একটি পূত-চরিত্র সন্তান দান কর। নিশ্চয়ই তুমি প্রার্থনা শ্রবণকারী। সুরা আলে ইমরান : ৩৮

আল্লাহতায়ালা তার দোয়া কবুল করলেন। কোরআন মাজিদের ভাষায়, ‘স্বীয় ইবাদত কক্ষে দাঁড়িয়ে প্রার্থনারত অবস্থায় ফেরেশতারা তাকে সম্বোধন করে বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ আপনাকে ইয়াহইয়া সম্পর্কে সুসংবাদ দিচ্ছেন। যিনি হবেন আল্লাহর কালেমা (ঈসা)-এর সত্যায়নকারী, নেতা, কলুষমুক্ত এবং সৎকর্মশীল নবীগণের অন্তর্ভুক্ত।’ সুরা আলে ইমরান : ৩৮

দোয়ায় শাস্তি কামনা
অনেকে দোয়ায় বলে, হে আল্লাহ! আমার অপরাধের শাস্তি দুনিয়ায় দিন। আর পরকালে আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন এবং আমাকে জাহান্নামের আজাব থেকে রক্ষা করবেন। এ ধরনের দোয়া করা মারাত্মক ভুল। বরং দোয়ায় দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জগতেরই কল্যাণ কামনা করতে হবে।

হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) একজন অসুস্থ মুসলমানকে দেখার জন্য আসলেন। লোকটি খুবই দুর্বল হয়ে গিয়েছিল। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কি আল্লাহর কাছে কোনো দোয়া করেছিলে বা কিছু চেয়েছিলে? সে বলল, হ্যাঁ, আমি দোয়া করতাম, হে আল্লাহ! আপনি যদি আখেরাতে আমাকে ক্ষমা না করেন তাহলে দুনিয়াতেই আমাকে শাস্তি দিন। এ কথা শুনে রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, সুবহানাল্লাহ! তুমি তা বরদাশ্ত করতে পারবে না বা সহ্য করতে পারবে না। বরং তুমি এ রকম প্রার্থনা কেন করলে না যে, হে আল্লাহ! দুনিয়াতে আমাদের কল্যাণ দাও এবং কল্যাণ দাও আখেরাতে। আর জাহান্নামের আগুন থেকে আমাদের মুক্ত রাখ। এরপর সে আল্লাহর কাছে এ দোয়া করল। ফলে আল্লাহ তাকে সুস্থ করে দিলেন। সহিহ মুসলিম : ২৬৮৮

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *