ইতিকাফের হুকুম, ইতিকাফ সুন্নত, ওয়াজিব, নাকি ফরজ? ইতিকাফ কোথায় কিভাবে করতে হয়?
আসুন জেনে নেই ইতিকাফ সম্পর্কিত কোরআনের বানী ও রাসুল (সাঃ) এর হাদীস
রমজানের শেষ দশকের একটি আমল হল ইতিকাফ করা। ইতিকাফ হল এই মোবারক দিন গুলোতে ইবাদর বন্দেগীর উদ্দেশে মসজিদে অবস্থান ও রাত্রি যাপন করা।
ইতিকাফ সম্পর্কিত কোরআনের বানী
এ সম্পর্কিত একটি কোরআনের বানী হচ্ছে- (১) “এবং ইব্রাহীম ও ইসমাইল কে আদেশ করলাম, তোমরা আমার গৃহকে তাওয়াফকারী, ইতিকাফকারী ও রুকু-সেজদাকারীদের জন্য পবিত্র করো”। (সূরা বাকরা: ১২৫)
(২) আর যতক্ষণ তোমরা ইতিকাফ অবস্তায় মসজিদে অবস্থান কর, ততক্ষন পর্যন্ত তোমাদের স্ত্রীদের সাথে মেলামেশা (যৌনকর্ম) করো না। (সূরা বাকরা: ১৮৭)
ইতিকাফ সম্পর্কিত হাদীসসমূহ
এবং এ সংক্রান্ত অনেক হাদীস রয়েছে চলুন জেনে নেই কয়েকটি হাদীস-
(১) আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত রমজান মাসের শেষ দশ দিন ইতিকাফ করতেন। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রীগণও ইতিকাফ করেছেন। (সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম)
(২) আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) প্রতি রমজান মাসে ১০ দিন ইতিকাফ করতেন তবে যে বছর তিনি ইন্তেকাল করেন সে বছর তিনি ২০ দিন ইতিকাফ করেছেন। (সহীহ বুখারী)
ইতিকাফের বিধান কি?
ইতিকাফের মূল বিধান হচ্ছে- এটি সুন্নত; ফরজ কিংবা ওয়াজিব নয়। তবে কেউ মানত করলে তাঁর উপর ওয়াজিব হবে। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন যে ব্যক্তি আল্লাহ্র আনুগত্য পালন করার মানত করে সে যেন সেই আনুগত্য আদায় করে নেয়। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ্র অবাধ্য হওয়ার মানত করে সে যেন আল্লাহ্র অবাধ্য না হয়। (সহীহ বুখারী)
এবং যেহেতু উমর (রাঃ) বলেছেন ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আমি জাহেলি যুগে মাসজিদুল হারামে এক রাত ইতিকাফ করার মানত করেছি। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন- তুমি তোমার মানত পূর্ণ করো। (সহীহ বুখারী)
ইতিকাফ এর ফজিলত
ইতিকাফ একটি মহান ইবাদাত, মদিনায় অবস্থানকালে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) প্রতি বছরই ইতিকাফ পালন করেছেন। দাওয়াত, তরবিয়ত, শিক্ষা ও জিহাদে বেস্ত থাকা সত্ত্বেও রমজানে তিনি ইতিকাফ ছাড়েননি। ইতিকাফ ঈমানি তরবিয়তের একটি পাঠশালা, এবং রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর হিদায়েতি আলোর একটি প্রতীক। ইতিকাফ অবস্তায় বান্দা নিজেকে আল্লাহ্র ইবাদতের জন্য দুনিয়ার অন্যান্য সকল বিষয় থেকে আলাদা করে নেয়। ঐকান্তিকভাবে মশগুল হয়ে পড়ে আল্লাহ্র নৈকট্য অর্জনের নিরন্তর সাধনায়। ইতিকাফ ঈমান বৃদ্ধির একটি মুখ্য সুযোগ। আমাদের সকলের উচিৎ এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিজের ঈমানি চেতনাকে প্রানীত করে তোলা ও উন্নতর পর্যায়ে পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করা। রমজানের শেষ দশকের রাতগুলোর যে কোন একটিতে শবে কদর রয়েছে। আর শবে কদরের ইবাদত ৮৩ বছর ৪ মাস ইবাদত করার চেয়েও উত্তম। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) শবে কদর প্রাপ্তির আশা নিয়েই ইতিকাফ করতেন।
ইতিকাফ এর উপকারিতা
ই’তিকাফ পালনকারী এক নামাজের পর আর এক নামাজের জন্য অপেক্ষা করে থাকে, আর এ অপেক্ষার অনেক ফজিলত রয়েছে। আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: নিশ্চয় ফেরেশতারা তোমাদের একজনের জন্য দোয়া করতে থাকেন যতক্ষণ সে কথা না বলে, নামাজের স্থানে অবস্থান করে। তারা বলতে থাকে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিন, আল্লাহ তার প্রতি দয়া করুন, যতক্ষণ তোমাদের কেউ নামাজের স্থানে থাকবে, ও নামাজ তাকে আটকিয়ে রাখবে, তার পরিবারের নিকট যেতে নামাজ ছাড়া আর কিছু বিরত রাখবে না, ফেরেশতারা তার জন্য এভাবে দোয়া করতে থাকবে।
ই’তিকাফ পালনকারী কদরের রাতের তালাশে থাকে, যে রাত অনির্দিষ্টভাবে রমজানের যে কোন রাত হতে পারে। এই রহস্যের কারণে আল্লাহ তা-আলা সেটিকে বান্দাদের থেকে গোপন রেখেছেন, যেন তারা মাস জুড়ে তাকে তালাশ করতে থাকে।
ই’তিকাফ পালনের ফলে আল্লাহ তা’আলার সাথে সম্পর্ক দৃঢ় হয়,এবং আল্লাহ তা’আলার জন্য মস্তক অবনত করার প্রকৃত চিত্র ফুটে উঠে। কেননা আল্লাহ তা’আলা বলেন: আমি মানুষ এবং জিন জাতিকে একমাত্র আমারই ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি। [সুরা আজ-জারিয়াত: ৫৬]
আর ইবাদতের বিবিধ প্রতিফলন ঘটে ই’তিকাফ অবস্থায়। কেননা ইতিকাফ অবস্থায় একজন মানুষ নিজেকে পুরোপুরি আল্লাহর ইবাদতের সীমানায় বেঁধে নেয় এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির কামনায় ব্যকুল হয়ে পড়ে। আল্লাহ তা-আলাও তাঁর বান্দাদেরকে নিরাশ করেন না, বরং তিনি বান্দাদেরকে নিরাশ হতে নিষেধ করে দিয়ে বলেছেন:
বলুন, হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের উপর জুলুম করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ও না। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। [সুরা ঝুমার : ৫৩]
ইতিকাফ সম্পর্কে শায়েখ আমহামদুল্লাহ ও মুফতী মুস্তাকুন্নবী হুজুরের মুখ থেকে চলুন শুনে নেই কিছু আলোচনা