শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজার ফজিলত ও বিধান

শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজার ফজিলত ও বিধান

শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা সুন্নত, নফল বা মুস্তাহাব তবে ফরজ নয়।

আলহামদুলিল্লাহ্‌, মহান আল্লাহ্‌র দরবারে শুকরিয়া যে, তিনি আমাদের কে অসংখ্য উপায় বলে দিয়েছেন যার দ্বারা আমরা তাঁর নৈকট্য অর্জন করতে পারি। সেই সাথে ঐ সমস্থ আমল গুলোর মাধ্যমে দুনিয়া ও আখেরাতের জীবনে প্রশান্তি ও সুখি জীবন যাপন করতে পারি। আল্লাহ্‌র নৈকট্য অর্জনের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে সিয়াম বা রোজা। রমজানের এক মাস রোজা আদায়ের পর আল্লাহ্‌ তা’আলা আমাদের শাওয়াল মাসের রোজার বেবস্থা করে দিয়েছেন। যেন আমরা বাড়তি কিছু সওয়াব লাভ করতে পারি। শাওয়াল মাসের এই ৬ টি রোজা রাখার ব্যাপারে বহু হাদিস রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে –

আবু আইয়ুব আল আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি রমযান মাসের রোজা পালনের পর শাওয়াল মাসের ৬ টি রোজা রাখলো, সে যেন সারা বছর রোজা রাখলো” (মুসলিম- ২৬৪৮)

একই অর্থে হাদিসটি বিভিন্ন সাহাবী বর্ণনা করেছেন এবং সেগুলো বিভিন্ন হাদিসের কিতাবে সংকলিত হয়েছে। নিচে আরো একটি হাদিস উল্লেখ করা হল।

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর মুক্ত দাস সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈদুল ফিতরের পর ৬ দিন রোজা রাখলো তা সারা বছর রোজা রাখার সমতুল্য।

“কেউ কোন সৎ কাজ করলে, সে তার ১০ গুন পাবে” (সূরা আন’আম- ১৬০)

শাওয়াল মাসের রোজা সম্পর্কিত কয়েকটি প্রশ্ন ও উত্তর তুলে ধরা হল-

১) শাওয়াল মাসের ৬ টি রোজা ফরজ নাকি ওয়াজিব?

  • সকল ওয়ালামদের মতেই শাওয়াল মাসের এই ছয়টি রোজা সুন্নত বা নফল। এটি আমাদের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়নি। এই রোজা গুলো রাখার জন্য আমাদেরকে উৎসাহ দেয়া হয়েছে যাতে করে আমরা কিছু অতিরিক্ত সওয়াব লাভ করতে পারি। রাখতে পারলে সওয়াব আছে কেউ কোন কারনে না রাখলে গুনাহ হবে না। যেহেতু এই রোজা গুলো সুন্নত বা নফল, ফরজ কিংবা ওয়াজিব নয়। ফরজ কিংবা ওয়াজিব ছেড়ে দিলে গুনাহ হয় ।

২) শাওয়াল মাসের রোজা কিভাবে রাখবো বা নিয়ম কি?

রমযান মাসের রোজা আমরা যেভাবে রাখি সেভাবেই শাওয়াল মাসের রোজা রাখবো। তবে সাহরীর সময় আমাদের কে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে কারণ রমযান মাসে মসজিদে মাইক থেকে শুনে আমরা সাহরী করি এবং সেই হিসেবে সাহরী শেষ করি। যেহেতু এর বাহিরে এই সুযোগ নাই তাই আমাদের কে সুবহে সাদীকের সময় নির্ণয় করে সাহরী শেষ করে নিতে হবে। আজান পর্যন্ত খেলে রোজা হবেনা আমাদের কে আজানের পূর্বেই সাহরী শেষ করে নিতে হবে। এই হিসেব টা আপনি নামাজ ও রোজার স্থায়ী ক্যালেন্ডারে পাবেন অথবা আপনার স্মার্ট ফোনের এপ এর মাধ্যমেও আপনি সাহরী ও ইফতারের সময় পেয়ে যাবেন। এই জন্য আমরা আপনাদের পরামর্শ দিব Muslim Day নামের এপ টি ব্যবহার করুন।

৩) শাওয়াল মাসের ৬ টি রোজা কি একটানা রাখবো নাকি গ্যাপ দিয়ে রাখবো?

যেহেতু ঈদের দিন রোজা রাখা নিষেধ তাই ঈদের পরদিন থেকে শাওয়াল মাসের শেষ দিনের মধ্যে যে কোন দিন রোজা রাখতে পারবেন। আপনার যেভাবে সুবিধা হয় সেভাবে রাখতে পারবেন। একটানা ৬দিন অথবা সপ্তাহে ২ টা করে রাখা যাবে আপনার ইচ্ছা।

৪) শাওয়াল মাসের রোজার নিয়ত কি?

আমরা জানি রোজার নিয়ত করা ফরজ। এই জন্য অনেকেই ভাবেন যে রমযান মাসে আমরা নিয়ত করি নাওয়াইতুয়ান আসুমা গাদাম….. কিন্তু এই শাওয়াল মাসের রোজার নিয়ত কিভাবে করবো বা এই নিয়ত কোথায় পাবো। প্রিয় ভাইয়েরা “নাওয়াইতুয়ান আসুমা গাদাম” এই নিয়ত বা আরবী বাক্যগুলো রাসুল (সাঃ) নিজে পড়েননি এবং উনার সাহাবীরাও পড়েননি। আপনি রাখার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন বা মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে এই রোজা গুলো রাখবেন এটাই নিয়ত। নিয়ত হচ্ছে মনের ইচ্ছা পোশন করা। নিয়ত করা ফরজ পড়া নয়। আমি আগামীকাল সাহরী করতে পারি আর না পারি রোজা রাখবো ইনশাআল্লাহ্‌ এটাই নিয়ত। এর বাহিরে বিভিন্ন বাক্য পাঠ করা বা এটাকে ইসলামের আবশ্যক মনে করা সম্পূর্ণ বিদআত।

৫) রমজানের কাজা রোজা আগে রাখবো নাকি শাওয়ালের রোজা আগে রাখবো?

যদি কারো কোন কারনবশত রমাজনের রোজা ছুটে থাকে, যেমন অসুস্থতা জনিত কিংবা মহিলাদের হায়েজ নেফাসের একটা কারণ হতে পারে। তাহলে তিনি অবশ্যই আগে কাজা রোজা গুলো রাখবেন পরে শাওয়াল মাসের রোজা রাখবেন। যদি কারো কাজা রোজার সংখ্যা কম হয়ে থাকে তাহলে আগে কাজা আদায় করে তারপর শাওয়াল মাসের রোজা রাখার ব্যাপারে বহু আলেমের মতামত রয়েছে। তবে যাদের কাজা রোজার সংখ্যা বেশি তিনি যদি আগে কাজা আদায় করতে গিয়ে শাওয়াল মাসের রোজা রাখার সময় হাতে না থাকে সেক্ষেত্রে আগে শাওয়াল মাসের রোজা রাখতে পরামর্শ দিয়েছেন বহু আলেমগণ।

৬) আইয়ামে বীজ বা সোমবার ও বৃহস্পতিবার শাওয়ালের রোজা রাখলে বাড়তি সওয়াব পাওয়া যাবে?

আমরা জানি প্রতি আরবি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোজা রাখা সুন্নত। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এই রোজাগুলো নিয়মিত আদায় করতেন। এই নফল রোজাগুলোকে বলা হয় আইয়ামে বীজ এর রোজা। এছাড়াও সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবার রাসুল (সাঃ) রোজা রাখতেন। কারণ হিসাবে তিনি উল্লেখ করেন যে সোমবার তাঁর জন্ম বার, তাই এদিন তিনি রোজা রাখেন। আর বৃহস্পতিবার বান্দার আমলনামা আল্লাহর কাছে পেশ করা হয়। আর নবী কারীম (সাঃ) এমন অবস্থায় তার আমল পেশ করা হোক পছন্দ করতেন যে তিনি ঐদিন রোজা অবস্থায় অর্থাৎ আল্লাহর বিশেষ ইবাদতের অবস্থায় আছেন। তাহলে আমরা বুঝতে পারছি আইয়ামে বীজের ৩ দিন ও সোম-বৃহস্পতিবার রোজা রাখা এমনিতেই সুন্নত।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে শাওয়ালের ছয়টি রোজা যদি আমরা বুদ্ধি করে সোমবার ও বৃহস্পতিবার রাখি। এবং আইয়ামে বীজের ৩ দিন রাখি তাহলে উভয় হাদীসের উপর আমল করার জন্য আমরা বেশি সওয়াবের আশা করতে পারি কিনা। বেশির ভাগ ওলামাগণের মত হচ্ছে ইনশাআল্লাহ এই দিনগুলোতে রোজা রাখলে উভয় সুন্নাতের উপর আমল করার জন্য আমরা আল্লাহর কাছে উভয় সুন্নতের সওয়ার আশা করতে পারি। আলেমগণ বলেন, ফরজ বা ওয়াজিবের সাথে নফলকে একই দিনে আদায় করা যাবে না। যেমনঃ কারো কাজা রোজা বাকি আছে, এমন অবস্থায় শাওয়াল মাসে কাজা এবং শাওয়ালের রোজা উভয়টার নিয়তে এক দিনে রোজা রাখা যাবে না। কিন্তু শাওয়ালের রোজা নফল একই সাথে সোম-বৃহস্পতির রোজা বা আইয়ামের বীজের রোজাও নফল। এই বিশেষ দিনগুলোতে শাওয়ালের নফল রোজা আদায় করলে ইনশাআল্লাহ উভয়টাই আদায় হয়ে যাবে।

৭) শাওয়াল মাসের রোজা কি সাক্ষী রোজা?

অনেকেই শাওয়াল মাসের রোজাকে সাক্ষী রোজা বলে থাকেন। এই পরিভাষাটি কুরআন ও হাদিসে পাওয়া যায়না। আমাদের দেশের কিছু মানুষ নিজে মনগড়া হাদিস বানিয়ে এইটিকে সাক্ষী রোজা বানিয়ে ফেলেছেন। মুলত “সাক্ষী রোজা” বলে ইসলামে কোন রোজা নেই।

শাওয়াল মাসের রোজা সম্পর্কে আরো বিস্তারিত দেখুন শায়খ আহমাদুল্লাহর বক্তব্য ও কয়েকটি প্রশ্ন – উত্তর

রেফারেন্স ও তথ্য কালেকশন

কালেকশন ১

কালেকশন ২

কালেকশন ৩

আপনার পরিবার ও বন্ধুদের জানাতে পোস্টটি শেয়ার করার অনুরোধ রইল।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *