স্ত্রী মারা গেলে দেনমোহরের টাকা কে পাবে?

স্ত্রী মারা গেলে দেনমোহরের টাকা কে পাবে?

তালাকদাতা স্বামী যদি নিজের কোনও ধরনের সওয়াবের আশা না করে ওই মৃত মহিলার পক্ষ থেকে মহরানার টাকা কোনও মসজিদ নির্মাণ বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দান করে দেয় তাহলে কি তার ওপর থেকে স্ত্রীর মহরানা আদায় হয়ে যাবে? আর যদি না হয় তাহলে কোন পদ্ধতী অবলম্বন করা যেতে পারে?

দেন-মোহর পরিশোধের আগেই স্ত্রী মারা গেলে করণীয়

এই প্রশ্নের উত্তরে আলেমরা বলেন, মহরানার টাকা আদায় করার আগেই কোনও নারী মারা গেলে তার উত্তরাধিকার কেউ থাকলে তারা মহরানার টাকা পাবে। তবে কোনও নারীর উত্তরাধিকার বলে কেউ না থাকলে এবং স্বামীর কাছে তার স্ত্রীর মহরানার টাকা পাওনা থাকলে সেই নারীর রূহে সওয়াব পৌঁছানোর নিয়তে স্বামী এই টাকা মসজিদ বা মাদরাসায় দান করে দিতে পারবে। এতে কোনও সমস্যা নেই। -(ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া, ১/৩০২, ফতোয়ায়ে রাহমানিয়া, ২/৯৫)

প্রসঙ্গত, দেনমোহর একজন বিবাহিত নারীর অধিকার। স্ত্রী যেন ন্যায্য অধিকার সঠিকভাবে পায় এবং নারীর যেন অবমূল্যায়ন না হয়- তার প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমরা নারীদেরকে দাও তাদের মোহর খুশিমনে। এরপর তারা যদি স্বেচ্ছায় স্বাগ্রহে ছেড়ে দেয় কিছু অংশ তোমাদের জন্য তাহলে তা স্বচ্ছন্দে ভোগ কর। -(সূরা নিসা : ৪)

দেন-মোহর নারীর প্রাপ্য

মোহর সম্পূর্ণরূপে নারীর প্রাপ্য। তার স্বতঃস্ফূর্ত সম্মতি ছাড়া অন্য কারো তাতে হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। সুতরাং মুমিনের কর্তব্য খুশিমনে স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে স্ত্রীর মোহর আদায় করা। কারো অনুরোধ-উপরোধ বা জোর-জবরদস্তির অপেক্ষায় থাকা কুরআনী শিক্ষার পরিপন্থী ও অতি নিন্দনীয় প্রবণতা।

স্ত্রী স্বতঃস্ফূর্তভাবে মোহরের কিছু অংশ ছেড়ে দিলেই কিংবা গ্রহণ করার পর স্বামীকে উপহার দিলে স্বামী তা স্বচ্ছন্দে ভোগ করতে পারবে। শুধু স্বামী নয় নারীর পিতা-মাতা, ভাইবোন বা অন্য কেউ নিজ কন্যার, বোনের বা আত্মীয়র মোহর তার স্বতঃস্ফূর্ত সম্মতি ছাড়া নিতে পারে না। নিলে তা হবে কুরআনের ভাষায় অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করার মতো।

স্বামীর জন্য মোহর মাফ করাতে স্ত্রীকে চাপ প্রয়োগ করা বা দুর্ব্যবহার করা বা অন্য কোনো কৌশল অবলম্বন করা বৈধ হবে না। এভাবে স্ত্রী মাফ করলেও মাফ হবে না।

কারণ, মোহরের টাকা হাতে না দিয়ে স্ত্রীর অন্তরের সন্তুষ্টি বোঝা মুশকিল। এ জন্য হাতে দেওয়ার কথা বলেছেন হজরত থানবী রহ.। –

(মাআরিফুল কোরআন : ২/২১৯; হেদায়া : ২/৩২৫; ফাতাওয়ায়ে রাহমানিয়া : ২/৮৮, আহকামুল কুরআন, জাসসাস ২/৫৭-৫৮; তাফসীরে ইবনে কাছীর ১/৪৪২; বয়ানুল কুরআন ২/৯৩; তাফসীরে উছমানী, পৃ. ১০০)

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *