হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ রাত লাইলাতুল ক্বদর এর ফজিলত ও আমল

হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ রাত লাইলাতুল ক্বদর এর ফজিলত ও আমল

হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ রাত লাইলাতুল ক্বদর এর ফজিলত ও আমল

হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ একটি রাত ‘লাইলাতুল ক্বদর। কেউ কেউ এ রাতকে শবে ক্বদর হিসাবে জানে। এ রাতে যে কোনো আমলই হাজার মাসের আমল থেকে শ্রেষ্ঠ। এ জন্য রাতটি মর্যাদার বা সৌভাগ্যের। তাইতো মহান আল্লাহ্‌ তা’আলা এ রাতটিকে ‘লাইলাতুল ক্বদর হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এ রাতের বৈশিষ্ট্য ও ফজিলত বর্ণনা করে আল্লাহ্‌ সুবহানু তা’আলা ক্বদর নামে একটি সূরা নাযিল করেছেন।

আল্লাহ তাআলা লাইলাতুল ক্বদরের ফাজিলত ও মর্যাদার ঘোষণা করে বলেন-

অডিও –

‘‘নিশ্চয়ই আমি নাযিল করেছি এ কুরআন মহিমান্বিত রাত্রিতে। আর আপনি কি জানেন মহিমান্বিত রাত্রি কী? মহিমান্বিত রাত্রি হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। সেই রাত্রে প্রত্যেক কাজের জন্য ফেরেশতাগণ এবং রূহ তাদের প্রতিপালকের আদেশত্রুমে অবতীর্ণ হয়। সেই রাত্রি শান্তিই শান্তি, ফজর হওয়া পর্যন্ত।

লাইলাতুল ক্বদর কত তারিখে?

লাইলাতুল ক্বদরের সঠিক সময় আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসুল (সাঃ) আমাদের কে নির্দিষ্ট করে কোন রাত হবে তা জানিয়ে দেননি। এ বেপারে হাদিসে বর্ণিত আছে-

আবূ সাঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে রমজানের মধ্যম দশকে ইতিকাফ করি। তিনি বিশ তারিখের সকালে বের হয়ে আমাদেরকে সম্বোধন করে বললেনঃ আমাকে লাইলাতুল ক্বদর (-এর সঠিক তারিখ) দেখানো হয়েছিল পরে আমাকে তা ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। তোমরা শেষ দশকের বেজোড় রাতে তার সন্ধান কর। আমি দেখতে পেয়েছি যে, আমি (ঐ রাতে) কাদা-পানিতে সিজদা করছি। অতএব যে ব্যক্তি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে ই‘তিকাফ করেছে সে যেন ফিরে আসে (মসজিদ হতে বের হয়ে না যায়)। আমরা সকলে ফিরে আসলাম (থেকে গেলাম)। আমরা আকাশে হাল্কা মেঘ খন্ডও দেখতে পাইনি। পরে মেঘ দেখা দিল ও এমন জোরে বৃষ্টি হলো যে, খেজুরের শাখায় তৈরি মসজিদের ছাদ দিয়ে পানি ঝরতে লাগল। সালাত শুরু করা হলে আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে কাদা-পানিতে সিজদা করতে দেখলাম। পরে তাঁর কপালে আমি কাদার চিহ্ন দেখতে পাই।

আরো একটি হাদীসে আম্মাজান আয়শা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা রমযানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে লাইলাতুল ক্বদ্‌র অনুসন্ধান করো।

এ ছাড়াও আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী করীম (সাঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি রমজানে ঈমানের সাথে ও সওয়াব লাভের আশায় সাওম পালন করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেয়া হয় এবং যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে, সওয়াব লাভের আশায় লাইলাতুল ক্বদ্‌রে রাত জেগে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেয়া হয়। 

লাইলাতুল ক্বদরের ফজিলত

লাইলাতুল ক্বদরের এক রাতের ইবাদত এক হাজার মাসের চেয়েও উত্তম তাই এই রাত্রি ইবাদতের মাধ্যমে অতিবাহিত করা হবে আমাদের মূল উদ্দেশ্য। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা বলেন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানের শেষ দশ দিন জিকির ও ইবাদতের এমন অবস্থা করতেন যা অন্য সময় করতেন না। এ রাতে বেশি বেশি নামাজ বন্দেগি জিকির তাদের প্রেরণা দান করে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন যখন লাইলাতুল কদর আসে তখন জিব্রাইল অন্যান্য ফেরেশতাগণের সাথে জমিনে নেমে আসেন এবং প্রত্যেকে ওই বান্দার জন্য রহমত মাগফেরাত এর দোয়া করেন যে দাঁড়িয়ে বসে আল্লাহর এবাদত এবাদতে মশগুল থাকে।  (বায়হাকী)

লাইলাতুল ক্বদর এর আলামত

*এ রাত বেশি ঠাণ্ডাও হয় না, বেশি গরমও হয় না, বরং তা হয় উজ্জ্বল

জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমাকে লায়লাতুল কদর দেখানো হয়েছিল, তবে পরবর্তীতে ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। এ রাত হলো রমজানের শেষ দশদিনের রাতগুলোয়। এ রাত হলো মুক্ত ও উজ্জ্বল, যা ঠাণ্ডাও না গরমও না।’(বর্ণনায় তিরমিযী)

*লায়লাতুল কদর শেষে সকালের সূর্য আলোকরশ্মি ব্যতীত সাদা হয়ে উদিত হয়।

উবায় ইবনে কা’ব রাযি. কে যখন লায়লাতুল কদরের আলামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয় তখন তিনি বলেছেন,‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে নিদর্শনের কথা বলেছেন, তার দ্বারা আমরা লায়লাতুল কদর চিনতে পারি, অর্থাৎ ওইদিন সূর্যোদয় হয় রশ্মিবিহীন আকারে।’ (বর্ণনায় ইবনে খুযায়মাহ)

সহীহ মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে, ‘আলোকরশ্মিবিহীন সাদা আকারে।’ (বর্ণনায় তিরমিযী)

লাইলাতুল ক্বদর এর আমল

কুরআন-সুন্নাহর আলোকে বুঝা যায়, ‘লাইলাতুল ক্বদর’ মর্যাদার একটি রাত। মর্যাদার এ রাতটি পেলে কী দোয়া পড়তে হবে, সে সম্পর্কেও এসেছে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা। অন্য হাদিসে এসেছে-

হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, একবার আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম- ‘হে আল্লাহর রাসুল! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন রাতে ‘লাইলাতুল কদর’ হবে, তা যদি আমি জানতে পারি, তাতে আমি কী (দোয়া) পড়বো? আপনি বলে দিন-

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি বলবে-

اللَّهُمَّ إِنَّكَ عُفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুয়্যুন; তুহিব্বুল আফওয়া; ফাফু আন্নি।’

অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল; ক্ষমা করতে ভালোবাসেন; অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন। (মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত)

এ ছাড়াও এই রাতে আপনি সময় নিয়ে ধিরে সুস্থে নফল নামাজ আদায় করতে পারেন। কোরআন তেলাওয়াত করতে পারেন জিকির করতে পারেন। বিশেষ করে আল্লাহ্‌র কাছে খাস দিলে ক্ষমা পার্থনা করতে হবে। আল্লাহ্‌র কাছে চাইতে হবে। এইরাতেই সব চাইতে বড় সুযোগ যত বেশি পারেন সারারাত জেগে থেকে ইবাদত বন্দেগীতে মশগুল থাকাই আবার জন্য লাভজনক হবে।

সর্বশেষ লাইলাতুল ক্বদর নিয়ে কিছু কথা

আজকের দিনে আমাদের সমাজে ২৭ রমজানের রাতকে শবে ক্বদর বা লাইলাতুল ক্বদর বলে সেই রাতে ইবাদর বন্দেগী ও হালুয়া রুটির আয়োজন করে থাকে তা সম্পূর্ণ ভুল এবং বিদআত। রাসুল (সাঃ) বলেছেন ক্বদরের সঠিক রাত আমাকে ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে তবে তোমরা শেষ দশকের বেজোড় রাত গুলোতে তা অনুসন্ধান করো। মুফাসসিরগণ বলেছেন শেষ দশকে যারা মসজিদে ইতিকাফ করবে তাদের লাইলাতুল ক্বদর পাওয়ার সম্ভবনা অনেক বেশি কারণ! তারা সর্বদা ইবাদতে মশগুল থাকে। সুতরাং আসুন সমাজের বানোয়াট শুধুমাত্র একটি দিনেকে শবে ক্বদর বানানো পরিহার করি। সম্ভব হলে আমরা রমজানের শেষ ১০ দিনই ক্বদেরর উদ্দেশে ইবাদত বন্দেগী করি। আল্লাহ্‌ তা’আলা আমাদের সহীহ বুঝ দান করুক এবং আমাদের ইবাদত গুলোকে কবুল করুক (আমিন)

লাইলাতুল ক্বদর সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা শুনুন শায়খ আহমদুল্লাহ’র আলোচনায়

 

লাইলাতুল ক্বদর এর বিষয়ে বহু মতামত আছে কিন্তু আমরা চেষ্টা করেছি সঠিক তথ্যগুলো বের করে আপনাদের মাঝে প্রচার করতে। কোন ভুলত্রুটি থাকলে অনুগ্রহপূর্বক আমাদের জানাবেন। ধন্যবাদ। আসসালামু আলাইকুম

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *