ইসলাম ধর্মে সুশিক্ষার মর্যাদা অনেক বেশি

ইসলাম ধর্মে সুশিক্ষার মর্যাদা অনেক বেশি

শিক্ষা মানব জাতির জন্য একটি অমূল্য সম্পদ।শিক্ষা মানুষকে সত্যিকার মানুষরূপে গড়ে তুলতে সাহায্য করে। মহান প্রভু ঘোষণা করেন, ‘দয়াময় আল্লাহ। তিনিই শিক্ষা দিয়েছেন কোরআন।

তিনিই সৃষ্টি করেছেন মানুষ।’ (সুরা আর রহমান, আয়াত ১-৩) উল্লিখিত সুরায় দয়াময় আল্লাহ মানব জাতিকে কোরআন শিক্ষা দেওয়ার বিষয়টি প্রথমে বর্ণনা করেছেন, এরপর তাদের সৃষ্টির তত্ত্ব উল্লেখ করেছেন। তাফসিরবিশারদ ইমামরা কোরআনের বর্ণনাগত এ ক্রমধারার রহস্য হিসেবে বলেছেন, মানুষ হিসেবে জন্মগ্রহণ করার ফলেই কাউকে সত্যিকার মানুষ বলা যায় না। বরং সুশিক্ষার মাধ্যমে সত্যিকার মানুষ হয়। সুশিক্ষা একটা জাতিকে অন্ধকার থেকে আলোর পথ দেখাতে পারে। এগিয়ে নিতে পারে কাক্সিক্ষত উন্নয়নের সোনালি সোপানে। তাই আল্লাহ মানব সৃষ্টি করে প্রথমেই তাদের জ্ঞান দান করেন। বর্বর জাহেলি যুগের পরিবর্তন সাধনের লক্ষ্যে আদর্শ শিক্ষক মহানবী (সা.)-কে কোরআনের শিক্ষা দিয়ে প্রেরণ করেন। আমাদের কাছে অতি প্রচলিত একটি বাক্য ‘শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড’।

মানবদেহের যাবতীয় অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মধ্যে মেরুদণ্ডের অপরিহার্যতা অপরিসীম। মেরুদণ্ডহীন মানুষ যেমন প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না, তেমনিভাবে শিক্ষা ছাড়া কোনো জাতি উন্নতির আসনে আরোহণ করতে পারে না। মেরুদণ্ডহীন মানুষ হয় পরমুখাপেক্ষী। একটি জাতি স্বনির্ভর ও অমুখাপেক্ষী হওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার অবদান অতুলনীয়। তাই বলা হয় শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। তবে প্রশ্ন জাগে জাতির মেরুদণ্ড শিক্ষা। কিন্তু শিক্ষার মেরুদণ্ড কী? কোন শিক্ষা জাতির উন্নয়নে পাথেয় এবং তাদের প্রতিষ্ঠার সহায়ক হতে পারে? আমাদের সামাজিক অবক্ষয় এবং মানবিক বিপর্যয়ের পরিস্থিতি হলো, শিক্ষার্থীর কাছে শিক্ষক ও গুরুজন চরমভাবে অবহেলিত ও লাঞ্ছিত হয়ে থাকে, আর শিক্ষাঙ্গনে চলে অস্ত্রের মহড়া। খুন, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, আত্মহত্যা, হত্যা, হানাহানি, মারামারি, লুটপাট, চাঁদাবজি, ত্রাস সৃষ্টি, বিভিন্ন অনৈতিক কাজে জড়িত থাকা এবং হিংসা-প্রতিহিংসা, আত্মসাৎ ও প্রতারণামূলক কাজে শিক্ষিত লোকদের সংশ্লিষ্টতার ঘটনা বর্তমানে খবরের শিরোনাম হয়ে থাকে। বাস্তব সত্য হলো, এসব অনাকাক্সিক্ষত ও মনুষ্যত্ববিবর্জিত শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড হতে পারে না। জাতির মেরুদণ্ড হওয়ার জন্য সুশিক্ষার প্রয়োজন। প্রয়োজন আদর্শগত শিক্ষা ও নৈতিক শিক্ষা, অন্ধকার ও নৈরাজ্য থেকে আলোর পথ প্রদর্শনের শিক্ষা। ওই শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যেই কোরআন অবতরণ। কোরআনের শিক্ষা একটি পথহারা মানব জাতিকে সত্য, মুক্তি ও আলোর দিশা দিতে পারে। দুর্নীতিমুক্ত সমাজ ও অনাবিল শান্তির পরিবেশ গড়তে পারে। মহান প্রভু ঘোষণা করেন, যারা ইমানদার আল্লাহ তাদের অভিভাবক, তিনি তাদের অন্ধকার হতে বের করে আলোয় নিয়ে যান।’ (সুরা আল বাকারাহ, আয়াত ২৫৭)

সুশিক্ষা, নৈতিক শিক্ষা বা কোরআনের শিক্ষা হলো শিক্ষার মেরুদণ্ড। অতএব আমাদের সার্বিক উন্নয়নের জন্য সুশিক্ষার প্রবর্তন করতে হবে। একজন মানুষকে সুশিক্ষা প্রদান করা হলে মানসিকতার পরিবর্তন ঘটবে, তার মধ্যে নৈতিক মূল্যবোধ জাগ্রত হবে, তার কাছ থেকে অন্যায় প্রবণতা লোপ পাবে, সৃষ্টি হবে সচেতনতা ও দায়বদ্ধতা। তার মাধ্যমে জাতি হবে প্রতিষ্ঠিত। আর এ শিক্ষা হবে জাতির মেরুদণ্ড। নৈতিক শিক্ষার অভাবে আজ অনেক শিক্ষিত শ্রেণি সামাজিক অবক্ষয়ের দিকে চলে গেছে। তাদের মাধ্যমে সমাজের উন্নয়ন আশা করা যায় না। বরং তারাই সুশিক্ষার অভাবে অনৈতিক কাজে জড়িত হয়ে দেশ ও জাতির জন্য অধঃপতনের কারণ হয়ে থাকে। তাই শিক্ষা তখনই যোগ্যতাসম্পন্ন নাগরিক তৈরি করতে সক্ষম হবে যখন তা হবে মানবতাসম্পন্ন সুশিক্ষা। তাই ইসলাম ধর্মে ইমান গ্রহণের পর সুশিক্ষার মর্যাদা অনেক বেশি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *