কুরআন নাজিলের মাস রমজানঃ উম্মতে মুহাম্মদির জন্য সুপার অফার

কুরআন নাজিলের মাস রমজানঃ উম্মতে মুহাম্মদির জন্য সুপার অফার

আবু তালহা তোফায়েল

পবিত্র মাহে রামাজান হল কোরআন নাজিলের মাস। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন: “রমজান মাস, এতে নাজিল হয়েছে আল-কোরআন, যা মানুষের দিশারি এবং স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যা সত্যের পার্থক্যকারী”। (সূরা বাকারা: ১৮৪)

রমজান মাসে সপ্তম আকাশের লওহে মাহফুজ থেকে দুনিয়ার আকাশে বায়তুল ইজ্জতে পবিত্র আল-কোরআন একবারে নাজিল হয়েছে। সেখান হতে আবার রমজান মাসে অল্প অল্প করে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি নাজিল হতে শুরু করে। কোরআন নাজিলের দুটি স্তরই রমজান মাসকে ধন্য করেছে। শুধু আল-কোরআনই নয় বরং ইবরাহিম আ.-এর সহিফা, তাওরাত, যবুর, ইঞ্জিলসহ সকল ঐশী গ্রন্থ এ মাসে অবতীর্ণ হয়েছে বলে তাবরানী বর্ণিত একটি সহি হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে। (সহি আল-জামে)

এ মাসে মানুষের হেদায়াত ও আলোকবর্তিকা যেমন নাজিল হয়েছে তেমনি আল্লাহর রহমত হিসেবে এসেছে সিয়াম। তাই এ দুই নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করতে বেশি বেশি করে কোরআন তিলাওয়াত করা উচিত। প্রতি বছর রমজান মাসে জিবরাইল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে পূর্ণ কোরআন শোনাতেন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-ও তাকে পূর্ণ কোরআন শোনাতেন। আর জীবনের শেষ রমজানে আল্লাহর রাসূল দু বার পূর্ণ কোরআন তিলাওয়াত করেছেন। সহি মুসলিমের হাদিস দ্বারা এটা প্রমাণিত।

তাছাড়া রমজান মাস ছাড়া বছরের ১১মাসে কুরআন তেলাওয়াতে ১টি হরফের বদলে দশ নেকী পাওয়া যায়, আর পবিত্র কুরান নাযিলের মাসে রমজানুল মোবারকে ১টি হরফ তেলাওয়াতের বদলে ৭০ নেকী পাওয়া যায়। রমজানুল মোবারক হলো মুসলিম উম্মাহর জন্য সুপার অফার। যে যতবেশী কুরান তেলাওয়াত করবে, সে ততবেশী আল্লাহর নৈকট্য লাভ করবে। তাই সহিহ শুদ্ধভাবে কুরান তেলাওয়াতে আমরা মনযোগী হতে হবে।

পৃথিবীতে নজির আছে, অনেক পণ্য অফার বা ডিসকাউন্ট দিয়ে বিক্রি করে, এর সময় বেধে দেওয়া হয়। মহান আল্লাহ ত ‘আরহামুর রা-হিমিন’। তিনি তাঁর বন্ধু মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মতের জন্য তাঁর নৈকট্য লাভের কিছু সুযোগ সুবিধা ও অফার দিয়েছেন। পূর্বেকার নবীদের (আ.) উম্মতেরা দীর্ঘ আয়ু পেত, কিন্তু আমরা ৬০/৬৩ বছর বাঁচি। এই অল্পদিনে আল্লাহর নৈকট্য লাভের সুযোগ লোফে নিতে পারি।

উম্মতে মুহাম্মদীর জীবনের আয়ু যেহেতু খুব স্বল্প। ৬০-৬৩ বছর জিন্দেগীতে পূর্বেকার নবী রাসূলের উম্মতের আয়ু দীর্ঘ থাকা সত্ত্বেও তাদের থেকে অনেক অনেক গুণ বেশী পুণ্যের অধিকারী হবে উম্মতে মুহাম্মদী, এটা আল্লাহ ঘোষণা করে দিয়েছেন। কারণ উম্মতে মুহাম্মদির জন্য স্বল্প আয়ুতে, অল্প সময়ে সুপার অফার রয়েছে। যেমন রমযান মাস কুরআন নাযিলের মাস, এ মাসে রয়েছে ১টি রাত ‘লাইলাতুল কদর’। এ রাত্রি সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা সূরা ক্বদরের ৩নং আয়াতে বলেন “লাইলাতুলকদর এক হাজার বছরের উপেক্ষায় উত্তম”।

-এটি একটি সুপার অফার। যা বিশ্লেষণ করে বুঝানো সম্ভব না। এই অফার বা সুযোগকে কাজে লাগানো হলো ভাগ্যবানদের পরিচয়। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন “যে রমযান মাসকে পেয়ে তার পাপকে মাফ করাতে পারলোনা, তার থেকে হতভাগা আর কেউ নেই”।

তাই আমরা বেশি করে কুরআন তেলাওয়াত করে মাওলার নৈকট্য লাভ করতে হবে; সুপার অফারকে কাজে লাগাতে হবে। আল্লাহ আমাদেরকে বেশী করে কুরান তেলাওয়াত করার তৌফিক দান করুক, সৌভাগ্যবানদের অন্তর্ভুক্ত করুক। আমিন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *