গানের সুরে কোরআন তেলাওয়াত কেয়ামতের আলামত- হাবিবুর রহমান মিছবাহ

গানের সুরে কোরআন তেলাওয়াত কেয়ামতের আলামত- হাবিবুর রহমান মিছবাহ

পবিত্র কোরআনুল কারিম পৃথিবীর অদ্বিতীয় নির্ভুল আসমানি কিতাব। এই কোরআনে আজ পর্যন্ত কোনো পণ্ডিত কিংবা ভাষাবিদ সামান্য ভুল প্রমাণ করতে পারেনি। বরং কোরআনের ভুল খুঁজতে গিয়ে কোরআনেই দিশা পেয়েছে এমন মনীষীর সংখ্যা কম নয়। কোরআন এমন এক কিতাব, যা বুঝে কিংবা না বুঝে, শুদ্ধ করে তেলাওয়াত করলেও সওয়াব। এমনকি অন্যের শুদ্ধ তেলাওয়াত শুনলেও সওয়াব। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোরআনের একটি হরফ পড়বে, সে একটি নেকি পাবে। আর একটি নেকি ১০টি নেকির সমান।’ (তিরমিজি)। ‘কোরআন পাঠকারীকে কেয়ামতের দিন বলা হবে কোরআন পড় এবং উপরে উঠতে থাকো। দুনিয়ায় যেভাবে তারতিলের সঙ্গে কোরআন পড়তে সেভাবে পড়। যেখানে আয়াত পড়া শেষ হবে, জান্নাতের সেই সুউচ্চ স্থানই হবে তোমার বাসস্থান।’ (তিরমিজি)

তবে পবিত্র কোরআন উচ্চারণগত বিশুদ্ধ তিলাওয়াতের বিকল্প নাই। অর্থ পরিবর্তন হয় এমন ভুল উচ্চারণে কোরআন তেলাওয়াত করা মারাত্মক গুনাহ। নারী কিংবা পুরুষ, প্রত্যেক ব্যক্তির ওপর বিশুদ্ধ কোরআন পড়া ফরজ। এতটুকু বিশুদ্ধ পড়া যাতে অর্থ পরিবর্তন না হয়। হজরত আলী (রা.) বলেন, “নবীজি (সা.) নির্দেশ দিয়েছেন, তোমরা এমনভাবে কোরআন পড় যেভাবে তোমাদের শিক্ষা দেওয়া হয়েছে।’ মহানবী (সা.) আরও বলেন, ‘যারা শুদ্ধভাবে কোরআন তেলাওয়াত করে, তারা সম্মানিত ফেরেশতাদের সমতুল্য মর্যাদা পাবে এবং যারা কষ্ট সত্ত্বেও কোরআন শুদ্ধভাবে পড়ার চেষ্টা ও মেহনত চালিয়ে যায়, তাদের জন্য রয়েছে দ্বিগুণ সওয়াব।’ (আবু দাউদ : ১৪৫৮)

ইচ্ছাকৃত পবিত্র কোরআনের অশুদ্ধ তেলাওয়াত, শুদ্ধ তেলাওয়াত না জেনেও ভুল তেলাওয়াত করা (শেখার চেষ্টাকালীন ভুল তেলাওয়াত মার্জনীয়) কিংবা গানের সুরে তেলাওয়াত করা পবিত্র কোরআন নিয়ে উপহাসের শামিল। আল্লাহ বলেন, ‘আর তাদের মধ্যে একদল রয়েছে, যারা বিকৃত উচ্চারণে মুখ বাঁকিয়ে কোরআন পড়ে যাতে তোমরা (ঈমানদাররা) মনে করো, তারা কোরআন থেকেই তেলাওয়াত করছে। অথচ তারা যা পড়ছে তা আদৌ কোরআন নয়। আর তারা বলে এসব কথা আল্লাহর পক্ষ থেকে আগত। অথচ এসব আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত নয়। তারা বলে এটি আল্লাহর কথা অথচ এসব আল্লাহর কথা নয়। আর তারা জেনে শুনে আল্লাহর প্রতিই মিথ্যারোপ করে।’ (সুরা আলে ইমরান : ৭৮)

আরো পড়ুনঃ কণ্ঠশিল্পী আগুনের গানের সুরে কোরআন তিলাওয়াত, যা বলছেন শায়খ আহমাদুল্লাহ

রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা আরবদের সুর ও উচ্চারণে কোরআন পড়। ফাসেক ও আল্লাহদ্রোহীদের সুর নকল করো না। কারণ, আমার পর অচিরেই এমন এক সম্প্রদায়ের আত্মপ্রকাশ ঘটবে, যারা গানের সুরে ভাড়াটে ক্রন্দনকারীনীদের মতো বিলাপ করে কোরআন তেলাওয়াত করবে। কোরআন তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তাদের ও তারা যাদের মুগ্ধ করবে তাদের অন্তর হবে ফেতনাময়।’ (শুআবুল ঈমান : ২৪০৬)

গানের সুরে কোরআন তেলাওয়াত করা কেয়ামতের অন্যতম আলামত। রাসুল (সা.) বলেন, ছয়টি বিষয় আগমনের পূর্বে মৃত্যুর প্রস্তুতি গ্রহণ করো। তার মধ্যে একটি হলো, বাদ্যযন্ত্রের সুরে কোরআন তেলাওয়াত করা, গানের সুরে তেলাওয়াতের জন্য তাদের প্রাধান্য দেওয়া, যদিও তারা জ্ঞানে স্বল্প।’ (মুসনাদে আহমাদ : ১৬০৮৩)। মহান রব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনকে আরবি ভাষায় অবতীর্ণ করেছেন। অতএব আরবি সঠিক উচ্চারণ মেনে তেলাওয়াত করা অপরিহার্য। শুদ্ধ ও তারতিলের (ধীরস্থিরতা) সঙ্গে কোরআন পড়া। কারণ আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা তারতিলের সঙ্গে কোরআন তেলাওয়াত করো।’ (সুরা মুজ্জাম্মিল : ৪)। আল্লাহ বোঝার ও আমল করার তাওফিক দিন।

লেখক: মুফতি হাবিবুর রহমান মিছবাহ, আলোচক ও সমাজকর্মী

সম্প্রতি শিল্পী আগুনের যে গানের সুরে কোরআন পড়া নিয়ে আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে তা নিম্নে দেয়া হল

 

Please Follow USHalaltune.com | Facebook 

Please Subscribe USHalal Tune Blog | Youtube

Related Articles