জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনের আমল ও ফজিলত

জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনের আমল ও ফজিলত

জিলহজ মাস মুসলিমদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ কেননা এই মাসে মুসলিমগণ হজ্ব পালন করেন। এ মাসের ৭ থেকে ১০ তারিখ পর্যন্ত হজ্ব পালনের নির্ধারিত তারিখ।

জিলহজ মাসের ১০ তারিখে মুসলমানদের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বাৎসরিক ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা বা কোরবাণীর ঈদ উদযাপন করা হয়। জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিন বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ। মর্যাদা বোঝাতে মহান আল্লাহ এ দিনগুলোর কসম খেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘শপথ প্রভাতের। শপথ দশ রাতের।’ (সুরা : ফাজর, আয়াত : ১-২)

এখানে যে ১০ রাতের কথা বলা হয়েছে, তা হলো জিলহজের প্রথম ১০ রাত। (তাফসিরে ইবনে কাসির, চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫৩৫)

চারটি পবিত্র ও সম্মানিত মাসের মধ্যে জিলহজ অন্যতম। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর বিধান ও গণনায় মাস ১২টি—আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে। এর মধ্যে চার মাস সম্মানিত।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৩৬)। এ আয়াতের ব্যাখ্যায় হাদিস শরিফে এসেছে, ওই মাসগুলো হলো জিলকদ, জিলহজ, মহররম ও রজব।

জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিন সম্পর্কে হাদিস শরিফে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর কাছে জিলহজের প্রথম ১০ দিনের নেক আমলের চেয়ে অন্য কোনো দিনের আমল উত্তম নয়। সাহাবারা জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসুল!

আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও এই ১০ দিনের আমলের চেয়ে উত্তম নয়? রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও এর চেয়ে উত্তম নয়; তবে ওই ব্যক্তি ছাড়া, যে তার সর্বস্ব নিয়ে জিহাদে অংশগ্রহণ করল এবং কিছুই নিয়ে ফিরে এলো না।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ২৪৩৮, বুখারি, হাদিস : ৯৬৯)

জিলহজের প্রথম ১০ দিনের আমল
সিয়াম : রোজা রাখা অন্যতম একটি নেক কাজ। তাই এ দিনগুলোতে নফল রোজা রাখা খুবই পুণ্যময়। হুনাইদা বিন খালেদ তাঁর স্ত্রী থেকে, তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জনৈক স্ত্রী থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) জিলহজ মাসের ৯ তারিখ, আশুরার দিন ও প্রত্যেক মাসের তিন দিন রোজা পালন করতেন।’ (আহমদ, আবু দাউদ ও নাসায়ি)

আরাফার দিন রোজা : আরাফার দিন রোজা রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী, আরাফার দিনের রোজা আগের ও পরের এক বছরের গুনাহের কাফফারা হবে।’ (মুসলিম)। তবে আরাফায় অবস্থানকারী হাজিদের জন্য রোজা রাখা মুস্তাহাব নয়। কেননা মহানবী (সা.) আরাফায় অবস্থান করেছিলেন রোজাবিহীন অবস্থায়।

হজ ও ওমরাহ সম্পাদন করা : হজ ও ওমরাহ এ দুটি হলো এ দশকের সর্বশ্রেষ্ঠ আমল। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘এক ওমরাহ থেকে আরেক ওমরাহ মধ্যবর্তী গুনাহের কাফফারাস্বরূপ আর কবুল হজের প্রতিদান কেবলই জান্নাত।’ (বুখারি, হাদিস : ১৭৭৩; মুসলিম, হাদিস : ৩৩৫৫)

তাকবির ও তাসবিহ পড়া : এই দিনগুলোতে তাকবির (আল্লাহু আকবার), তাহমিদ (আলহামদু লিল্লাহ), তাহলিল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) ও তাসবিহ (সুবহানল্লাহ) পড়া সুন্নত। এ দিনগুলোয় জিকির-আজকারের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘এ ১০ দিনে নেক আমল করার চেয়ে আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয় ও মহান কোনো আমল নেই। তাই তোমরা এ সময়ে তাহলিল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ), তাকবির (আল্লাহু আকবার) ও তাহমিদ (আল-হামদুলিল্লাহ) বেশি বেশি করে পাঠ করো।’ (বায়হাবি, শুআবুল ঈমান, হাদিস : ৩৪৭৪)

ফজিলত:
*সুরা ফাজরে প্রথম দুই আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘শপথ ভোরবেলার! শপথ ১০ রাতের!’ তাফসিরে ইবনে কাসিরে ১০ রাতের শপথ সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ১০ রাতের শপথ দ্বারা জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনই উদ্দেশ্য।

*সুরা হজের ২৮নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তারা যেন নির্দিষ্ট দিনসমূহে আল্লাহর স্মরণ করে।’
এ আয়াতে নির্দিষ্ট দিনসমূহের আল্লাহর স্মরণের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিখ্যাত মুফাসসির ও সাহাবি হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, ‘(এ নির্দিষ্ট দিনসমূহ দ্বারা উদ্দেশ্য) জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিন।’

*জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনের আমলের ফজিলত জিহাদের চেয়েও মর্যাদাবান। হাদিসে এসেছে-
হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, এ দিনগুলোর (জিলহজের প্রথম ১০ দিনের) আমলের তুলনায় কোনো আমল-ই অন্য কোনো সময় উত্তম নয় । তারা বলল : জিহাদও না ? তিনি বললেন : জিহাদও না, তবে যে ব্যক্তি নিজের জানের শঙ্কা ও সম্পদ নিয়ে বের হয়েছে, অতঃপর কিছু নিয়েই ফিরে আসেনি।’ (বুখারি)

*আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয় জিলহজের প্রথম ১০ দিনের আমল। হাদিসে এসেছে-
হজরত ইবনে ওমর রাদিআল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর কাছে কোনো দিনই প্রিয় নয়, আর না তাতে আমল করা, এ দশ দিনের তুলনায়। সুতরাং তোমরা তাতে (জিলহজের প্রথম ১০ দিন) বেশি বেশি তাহলিল, তাকবির ও তাহমিদ পাঠ কর।’ (তাবারানি)

কুরআন ও হাদিসের আলোকে ওলামায়েকেরামও জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনের ইবাদতে একনিষ্ঠভাবে নিজেদের নিয়োজিত করতেন। যার প্রমাণ দিয়ে গেছেন যুগশ্রেষ্ঠ ওলামায়েকেরাম।

*হজরত সাঈদ ইবনে জুবায়ের রাহিমাতুল্লাহি আলাইহি জিলহজের প্রথম ১০ দিনের ইবাদতে নিজেকে একনিষ্ঠভাবে নিয়োজিত রাখতেন। যেভাবে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিলহজ মাসে ইবাদত-বন্দেগি করতেন।

হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনায় এসেছে, ‘যখন জিলহজ মাসের ১০ দিন প্রবেশ করত, তখন তিনি খুব মুজাহাদা করতেন, যেন তার উপর তিনি শক্তি হারিয়ে ফেলবেন।’ (দারেমি)

*হজরত ইবনে হাজার আসকালানি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, ‘জিলহজ মাসের ১০ দিনের ফজিলতের ক্ষেত্রে যা স্পষ্ট তা হচ্ছে- এখানে মূল ইবাদাতগুলোর সমন্বয় ঘটেছে। অর্থাৎ নামাজ, রোজা, সাদকা ও হজ। যা অন্যান্য সময় যথাযথভাবে আদায় করা হয় না।’ (ফতহুল বারি)

পবিত্র রমজান মাসের শেষ ১০ রাত যেমন মর্যাদার ঠিক মুমিন মুসলমানের জন্য জিলহজের প্রথম ১০ দিন ও রাতের ইবাদত-বন্দেগিও অনেক মর্যাদা ও সম্মানের।

মুসলিম উম্মাহর উচিত, জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিন রোজা পালনের মাধ্যমে অধিক সাওয়াব ও ফজিলত লাভের করা। বিগত জবিনের গোনাহ থেকে নিজেদের মুক্ত করা। আল্লাহর নৈকট্য ও ভয় অর্জন করা।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন/আইটি

ভিডিও – শায়খ আহমাদুল্লাহ

 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *