দুনিয়ার সঙ্গে কেমন ছিলো রাসুল সা. এর সম্পর্ক

দুনিয়ার সঙ্গে কেমন ছিলো রাসুল সা. এর সম্পর্ক

হযরত আয়শা রা. ইরশাদ করেন- রাসূল সা. যখন শয্যা গ্রহণ করতেন তখন তার পবিত্র দেহ মুবারকে চাটায়ের দাগ বসে যেত। তাই একদিন আমি বিছানার চাদরটি ডাবল করে বিছালাম যেন নবীজীর সা. এর গায়ে দাগ না পড়ে এবং তিনি যেন আরাম পান। শোয়ার সময় রাসূল সা. আমাকে বললেন, হে আয়শা! চাদর ডাবল করোনা, পূর্বের ন্যায় থাকতে দাও।

আরেক রেওয়ায়েতে আছে- একদা হযরত আয়শা রা. শখ করে ঘরের দেয়ালে ছবি অংকিত একটি চাদর টানালেন। এতে রাসুল সা. অনেক বেশি অসন্তুষ্ট হলেন এবং বললেন, তুমি যতক্ষণ এ পর্দা না সরাবে ততক্ষণ আমি ঘরে প্রবেশ করব না। এরপর আরেক দিন তিনি আরেকটি চাদর টানালেন (তাতে ছবি ছিল না)। তবুও রাসূল সা. বললেন, হে আয়শা! আমি দুনিয়া দিয়ে কি করব? আমার দৃষ্টান্ত তো সে যাত্রীর ন্যায় যে, স্বল্প সময়ের জন্য কোন বৃক্ষের ছায়ায় বিশ্রাম নেয়। এরপর আবার স্বীয় গন্তব্যের দিকে ছুটে চলে।

বস্তুত প্রিয়নবী সা. উম্মতকে দুনিয়াবী কাজ কর্ম হতে নিষেধ করেন নি, বরং এ শিক্ষা দিয়েছেন যে, এই নশ্বর পৃথিবীর পেছনে বেশী সময় ব্যয় করো না। আখেরাতের প্রস্তুতিকেই প্রাধান্য দাও।

রাসূল সা. ইরশাদ করেন, দুনিয়ার জন্য সে পরিমাণ মেহনত কর যে পরিমাণ সময় তোমাকে এখানে থাকতে হবে। আর আখেরাতের জন্য সে পরিমাণ চেষ্টা এবং সময় ব্যয় কর যে পরিমাণ সময় তোমাকে সেখানে থাকতে হবে। আখেরাতে আমাদেরকে থাকতে হবে সদাসর্বদা এবং অনাদি-অনন্তকাল।

তাই তার জন্য মেহনতও করতে হবে সীমাহীন। আর দুনিয়াতে আমরা থাকবো অনুর্ধ্ব ৬০-৭০ বছর। আর এরও কোন গ্যারান্টি নেই। তাই এর জন্য সামান্যতম মেহনতই যথেষ্ট। এটাই প্রিয় নবীর সা. এর শিক্ষা। অথচ আজ আমরা চব্বিশটি ঘন্টাই শুধু দুনিয়া-দুনিয়া করে মরছি। কিন্তু পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের জন্য সর্বোচ্চ আধা ঘন্টা সময় ব্যয় করতেও আমাদের শত আপত্তি, বাধা, দ্বিধা ও নানা বাহানা।

সারা দিন শুধু মসজিদে বা খানকায় বসে থাকার নাম আখেরাতের কাজ করা নয়। দুনিয়াতে মানুষের শত জরুরত আছে। যদি এ জরুন্নতগুলোকে সাওয়াবের নিয়তে আদায় করা হয় তাহলে এক দিকে যেমন পার্থিব চাহিদা পূরণ হবে তেমনি অপর দিকে পরকালের সঞ্চয়ও হয়ে যাবে।

যেমনঃ পানাহারের সময় যদি সত্যিকারের নিয়ত করা হয় যে, এই পানাহার দ্বারা অর্জিত শক্তি দিয়ে আমি আল্লাহর ইবাদত বন্দেগী করবোর ব্যবসা-বাণিজ্য করার সময় যদি নিয়ত করে যে, আল্লাহর রাসূল ও জীবিকার জন্য ব্যবসা- বাণিজ্য করেছেন। তাই আমিও করছি। এভাবে প্রতিটি কাজই যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির নিয়তে রাসূলের সুন্নাত তরিকা অনুযায়ী হয় তাহলে সবই ইবাদতে পরিণত হবে এবং এর জন্য সাওয়াবও পাওয়া যাবে।

এ ছাড়াও মানুষের সাধারণত: হাতে বা পায়ে কাজ থাকে। মুখ প্রায় সকলেরই অবসর থাকে। বস, কাজ করার ফাকে ফাকে মুখে বেশি বেশি আল্লাহর যিকির করা যায়। ফলে বিশুদ্ধ নিয়তের সাওয়াব, সুন্নাত তরিকায় কাজ করার সাওয়াব এবং মুখে যিকির করার সাওয়াব সব মিলিয়ে দেখা যাবে আখেরাতের বিরাট পুঁজি হয়ে গেছে। আর এ ভাবেই আল্লাহ তায়ালা এ উম্মতকে জান্নাত দান করবেন। নতুবা মাত্র ৬০-৭০ বৎসরের হায়াতে এত বিরাট গাঠুরি বোঝাই করা কোন ক্রমেই সম্ভব নয়।

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে বেশি বেশি নেক কাজে লেগে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

  • মুফতি তাকি উসমানি

সম্মানিত পাঠক, আমাদের ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেইজে আপনাকে স্বাগতম

Please Follow US – Halaltune.com | Facebook 

Please Subscribe US – Halal Tune Blog | Youtube

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *