নামজের গুরুত্ব ও সৌন্দর্য

নামজের গুরুত্ব ও সৌন্দর্য

ইসলামের প্রতিটি বিধান ও আমলের মধ্যেই যৌক্তিকতা ও সৌন্দর্য নিহিত রয়েছে। ইসলামে এমন কোনো আমল নেই, যা মুসলমানের জন্য পালন করা কষ্টকর। ইসলামে পাঁচটি স্তম্ভ রয়েছে —কালেমা, নামাজ, রোজা, হজ্জ ও জাকাত। এই পাঁচ স্তম্ভের মধ্যে নামাজ এবং রোজা ধনী- দরিদ্র সবার জন্যই ফরজ। তবে হজ ও জাকাতের বিধান শুধু ধনী ব্যক্তিদের জন্য ফরজ। শারীরিক অসুস্থতাসহ কিছু কিছু ক্ষেত্রে ফরজ রোজা ভঙ্গ করার হুকুম রয়েছে এবং পরে তা আদায় করে নেওয়া যায়। রোজা ভঙ্গের পর অক্ষম ব্যক্তি ফকির, মিসকিনকে পেট ভরে খাবার খাওয়ানোর মাধ্যমে রোজার কাফফারা আদায় করতে পারবেন—এই রকম বিধানও ইসলামে রয়েছে। তবে নামাজের ক্ষেত্রে কাজা করার হুকুম শুধু বিশেষ ক্ষেত্রেই দেওয়া হয়েছে এবং নামাজের কোন কাফফারা বা বদলা হয় না। বলা হয়েছে, যদি পানির অভাবে নামাজ কাজা হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তবে সে যেন তাইয়ামুম করে নামাজ আদায় করে। যদি কোনো ব্যক্তি দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে না পারে, সে যেন বসে বসে নামাজ আদায় করে নেয়। যদি কারো বসে নামাজ পড়তে কষ্ট হয়, সে যেন শুয়ে নামাজ আদায় করে। এমনকি চোখের ইশারায় নামাজ আদায় করতে বলা হয়েছে।

দেহে জ্ঞান থাকা পর্যন্ত কোনো অবস্থায় কোনো ব্যক্তির জন্য নামাজ না পড়ার বা বাদ দেওয়ার বিধান নেই। জ্ঞানসম্পন্ন অসুস্থ অবস্থায়ও নামাজ আদায় করতে হবে। অর্থাত, ইসলামে সুস্থ ব্যক্তির জন্য যেমন নামাজের নিয়ম ঠিক করে দেওয়া হয়েছে, ঠিক তেমনিভাবে অসুস্থ ব্যক্তির নামাজের ব্যাপারেও রয়েছে কিছু নিয়মনীতি। প্রতিটি মুমিন মুসলমানের জন্য ইমান গ্রহণের পর প্রথম ও প্রধান ইবাদত নামাজ। নামাজের জন্য কিছু নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে এবং সে অনুযায়ী যথাসময়ে নামাজ আদায় করাও জরুরি। কেননা, পরকালে সব মুসলমানের কাছে সর্বপ্রথম নামাজের হিসাব গ্রহণ করা হবে। যে ব্যক্তির নামাজের হিসাব দিতে সহজ হবে, তাঁর পরবর্তী সব হিসাব সহজ হয়ে যাবে।

নামাজ আদায়ে দায়সারা ভাব দেখানো মোটেই উচিত নয়। আল্লাহ তায়ালার প্রতি ধ্যান রেখে পরিপূর্ণ মনোযোগের সঙ্গে নামাজ আদায়ের কথা বলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘সেই সব মুমিন সফলকাম, যারা তাদের নামাজে বিনয়াবনত থাকে।’ – (সুরা মুমিনুন, – আয়াত : ১-২) সঠিকভাবে নামাজ আদায় ও মনোযোগ ধরে রাখার ব্যাপারে এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রসুলুল্লাহ (স.)-এর কাছে জনৈক ব্যক্তি সংক্ষিপ্ত উপদেশ কামনা করলে তিনি তাকে বলেন, ‘যখন তুমি নামাজে দণ্ডায়মান হবে, তখন এমনভাবে নামাজ আদায় করো, যেন এটিই তোমার জীবনের শেষ নামাজ।’ (ইবনে মাজাহ, মিশকাত, হাদিস : ৫২২৬) এ প্রসঙ্গে রসুলুল্লাহ (স.) আরো বলেন, আপনি এমনভাবে আল্লাহর ইবাদত করবেন, যেন আপনি তাকে দেখছেন, আর যদি আপনি তাকে দেখতে না পান, তবে (বিশ্বাস রাখবেন যে) তিনি অর্থ্যাত্ আল্লাহ আপনাকে দেখছেন।

প্রতিদিন সিজদা দিয়ে বান্দা এটিই প্রমাণ করে যে, সে একমাত্র আল্লাহর কাছেই আত্মসমর্পণ করেছে এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো আনুগত্য করে না। একমাত্র নামাজের মাধ্যমেই মহান রবের কাছাকাছি আসা যায়। একমাত্র নামাজের মাধ্যমেই বান্দা তার প্রভুর সঙ্গে সরাসরি কথা বলার সুযোগ পায়। ইসলামের অন্যতম সৌন্দর্য হচ্ছে কোনো দালাল ছাড়াই সরাসরি আল্লাহর সঙ্গে বান্দা নামাজের মাধ্যমে সাক্ষাত করতে পারে এবং নিজের জন্য সাহায্য কামনা করতে পারে। এ প্রসঙ্গে সূরা বাকারার ১৫৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা ধৈর্য্য ও সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করো।’

নামাজের মধ্যে অন্যতম একটি সৌন্দর্য হচ্ছে, নামাজের সময় সব ভেদাভেদ ভুলে সবাই একই কাতারে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করে। সবাই আল্লাহর কর্তৃত্বের কাছে প্রকাশ্যে মাথা নত করে। এটিই নামাজের আসল সৌন্দর্যের প্রতিফলন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *