‘ নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য রাসুলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ ‘

‘ নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য রাসুলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ ‘

১২ রবিউল আউয়াল। বিশ্ব মানবতার মুক্তির দূত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানব জাতির সামনে আলোকবর্তিকা স্বরূপ আবির্ভাবের মুবারক দিন আজ। আজ তার ওফাতেরও দিন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে স্বয়ং মহান আল্লাহ সোবহানাহু তায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, “নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য রাসুলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ’ (সূরা আজহাব, আয়াত: ২১)।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শানে আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনের বহু জায়গায় সুস্পষ্টভাবে বার বার উল্লেখ করেছেন। মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহতায়ালার প্রেরিত পুরুষ, নবী ও রাসুল। তিনি সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী। বিশ্ব মানবতার মুক্তি ও কল্যাণের প্রতীক। ঐশী দায়িত্বের সফল বাস্তবায়নকারী। ঐশী বাণীর সর্বোত্তম প্রচারক। বিশ্বমানবতার মুক্তির দিশারী তিনি।

ঐতিহাসিক বর্ণনায় নিঃসন্দেহে প্রমাণিত হয়েছে যে, তিনি মহান চরিত্রের অধিকারী। ধর্ম, বর্ণ, ভাষা, নারী, পুরুষ, আমির, ফকির সকলের জন্য তিনি ন্যায়, সততা, সত্যবাদিতা ও সাম্যের মূর্ত প্রতিচ্ছবি। তিনি নবীয়ে রহমত। শান্তি, কল্যাণ ও প্রশান্তির বার্তাবহ। সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুনিয়ার মানবমণ্ডলীর জন্য অনুকরণ-অনুসরণযোগ্য ব্যক্তিত্ব, যে মহামানবের মহত্তম জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে রয়েছে উত্তম আদর্শ।

অন্ধকারাচ্ছন্ন দুনিয়ার পথভ্রষ্ট মানুষকে তিনি দিয়েছেন আলোর দিশা। অজ্ঞতা ও মূর্খতার অন্ধকারে নিমজ্জিত মানুষের জন্য তিনি কল্যাণের বাতিঘর। তিনি দুনিয়া ও আখেরাতে সফলতা হেদায়েতের পথপ্রদর্শক। জগতসমূহের জন্য তিনি রহমত স্বরূপ। কল্যাণের ফল্গুধারা তিনি।

রাসুল হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আবির্ভাবে পূর্ব-পশ্চিম, উত্তর-দক্ষিণ, সমগ্র জগতে নবুওয়তের নূরের আলো উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছিল। মাত্র ২৩ বছরের স্বল্পকালীন নবুয়তি জীবনে তিনি মানব জাতিকে নৈতিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতির এমন উচ্চশিখরে উন্নীত করেছিলেন যে, বিশ্বের ইতিহাসে এমন নজির আরেকটিও নেই। আর কূপমণ্ডূকতায়, অজ্ঞতায় ও অন্ধকারে নিমজ্জিত মানুষ তার স্পর্শে পরিণত হয়েছিল ‘আশরাফুল মাকলুকাত’। প্রতিটি মানুষ নবীর সংস্পর্শে হয়েছিল ‘ইনসানে কামেল’।

হিংসা, বিদ্বেষ, হানাহানির বিরুদ্ধে তিনি শান্তির প্রতিষ্ঠাতা। হিংসার বিরুদ্ধে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের রচয়িতা তিনি। প্রতিহিংসার বিরুদ্ধে তিনি ক্ষমা ও দয়ার অতুলনীয় দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী। তিনি মানবাধিকারের সংরক্ষক। সুকর্মের আদেশ ও অসৎ কর্মের নিষেধ প্রদানকারী। জুলুম, নিপীড়ন, শোষণ, নির্যাতনের বিলোপকারী। মানবতাবাদের অগ্রদূত তিনি।

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশিত পথে মানুষ পেয়েছে প্রকৃত মুক্তির স্বাদ ও যথার্থ স্বাধীনতা। এক আল্লাহ ছাড়া অন্যের দাসত্বের শৃঙ্খল ছিন্ন করে অবনত মানব জাতি উন্নততর ও স্বাধীন হয়েছে। জ্ঞান, বিজ্ঞান, কলা, মানবিকতা ও ঔদার্যের মাধ্যমে লাভ করেছে উচ্চতর মর্যাদা। ভোগ, বিলাস, অপচয়ের হাত থেকে রেহাই পেয়ে মানুষ হয়েছে পরিশীলিত, সুন্দর ও কল্যাণকামী এবং সরল-সঠিক পথের অনুসারী। সরল ও সঠিক পথের সন্ধান পেয়ে মানুষ লাভ করেছে একমাত্র সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ সোবহানাহু তায়ালার নৈকট্য এবং হই ও পরকালীন নাজাত।
পবিত্র কোরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তার ফেরেশতারা নবীর ওপর দরুদ ও সালাম পেশ করে। হে মুমিনগণ, তোমরাও নবীর ওপর দরুদ পড়ো এবং তাঁকে যথাযথভাবে সালাম জানাও’ (সূরা আল আহজাব, আয়াত: ৫৬)।

হজরত কাব ইবনে ওজারা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে উল্লেখ আছে যে তিনি বলেন, একদিন আমরা হজরত রাসুলুল্লাহকে (সা.) জিজ্ঞেস করলাম, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আপনার ওপর আমরা কীভাবে দরুদ পড়ব?’ তিনি বললেন, ‘বলো, আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আ-লি মুহাম্মাদ; কামা সাল্লাইতা আলা ইবরাহিমা ওয়া আলা আ-লি ইবরাহিমা ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ; আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আ-লি মুহাম্মাদ-কামা বারাকতা আলা ইবরাহিমা ওয়া আলা আ-লি ইবরাহিমা ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ।’

অর্থাৎ: হে আল্লাহ, তুমি মুহাম্মদ (সা.) এবং তার বংশধরদের ওপর এমন রহমত নাজিল করো, যেমনটি করেছিলে ইবরাহিম ও তার বংশধরদের ওপর। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসনীয় ও সম্মানীয়। হে আল্লাহ, তুমি মুহাম্মদ (সা.) এবং তার বংশধরদের ওপর বরকত নাজিল করো, যেমন বরকত নাজিল করেছিলে ইবরাহিম ও তার বংশধরদের ওপর। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসনীয় ও সম্মানীয়। (বোখারি ও মুসলিম)

পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মহত্তম জীবনচরিতের সুমহান আদর্শসমূহ ধারণের মধ্যেই শান্তি, কল্যাণ ও সফলতা নিহিত রয়েছে। ইহকাল ও পরকালের উন্নতি ও মুক্তির যে পথ পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবন, কর্ম, চরিত্র সে আলোকিত পথের বাস্তব নমুনা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পথ, সীরাত ও সুন্নাহর সঠিক অনুসরণ এবং প্রতিদিন-প্রতিনিয়ত তাঁর প্রতি ও তাঁর পরিবারের প্রতি নিয়মিত দরুদ শরিফ পাঠের মাধ্যমে অশেষ উন্নতি ও কল্যাণ হাসিল করাই সকলের অপরিহার্য কর্তব্য।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *