মক্কার কনফারেন্সে আল্লামা মাহমূদুল হাসানের ৭ প্রস্তাবনা

মক্কার কনফারেন্সে আল্লামা মাহমূদুল হাসানের ৭ প্রস্তাবনা

সৌদি আরবের ইসলাম ও দাওয়াহ বিষয়ক মন্ত্রণলায় কর্তৃক আয়োজিত মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, মধ্যপন্থা ও সহনশীলতা প্রসারের লক্ষ্যে মক্কায় শুরু হয়েছে দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক “যোগাযোগ ও সংহতি” শীর্ষক ইসলামি কনফারেন্স।

এতে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন কওমি মাদরাসা শিক্ষার সর্বোচ্চ অথরিটি আল- হাইয়াতুল উলয়া লিল-জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মুহিউস সুন্নাহ আল্লামা মাহমূদুল হাসান।

আন্তর্জাতিক এই সম্মেলনের মুহিউস সুন্নাহ আল্লামা মাহমূদুল হাসান কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনা পেশ করেন। প্রস্তাবনাগুলো হচ্ছে :

১। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে দেশ জাতি ও ইসলামের জন্য ওলামা-মাশায়েখদের যে আত্মত্যাগ ও কুরবানি রয়েছে, সেগুলো মূল্যায়ন করে আরবি ও ইংরেজি ভাষায় একটি বিশ্বকোষ সংকলন করা।

২। চার মাযহাবের ইমামদের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শনের ব্যাপারে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে সৌদি সরকারের সুস্পষ্ট বার্তা প্রচার করা। প্রাচ্যবিদ ও তাদের এজেন্টদের পক্ষ হতে ইমামগণের ব্যাপারে যে সমস্ত অপপ্রচার ও অপবাদ আরোপ করা হয়, চূড়ান্তভাবে তা খণ্ডন করা এবং নির্ভরযোগ্য চার মাযহাবের বিরুদ্ধে সকল তর্ক- বিতর্ক নিরসনের লক্ষ্যে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ করা। কারণ, অনুসরণীয় ইমামগণের অসম্মান করার প্রবণতা একটি শ্রেণীর মধ্যে ক্যান্সারের মতো ছড়িয়ে পড়েছে, যা উম্মাহর শরীরকে ক্ষত-বিক্ষত করে দিচ্ছে এবং মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও সংহতির পরিবেশকে কলুষিত করছে।

৩। সমাজে নাস্তিকতা ও ধর্মহীনতার প্রচার-প্রসার ঘটায়-এমন সব প্রোগ্রাম এবং টকশো টেলিভিশন ও ইলেক্ট্রিক মিডিয়ায় প্রচার বন্ধ করা

৪। সৌদিতে প্রতি বছর ‘যোগাযোগ ও সংহতি’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক কনফারেন্স আয়োজন করা এবং বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম রাষ্ট্রগুলোতে স্থানীয় সম্মেলনের ব্যবস্থা করা।

৫। এই উম্মাহর অন্যতম বৈশিষ্ট হচ্ছে মধ্যমপন্থা। এ চেতনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সকল মুসলিম রাষ্ট্রে সেমিনারের ব্যাবস্থা করা।

৬। বাংলাদেশে কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীদের জন্য সৌদি সরকারের অর্থায়নে আল-হাইয়াতুল উলয়া লিল- জামিয়াতিল কওমিয়ার অধীনে একটি ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা।

৭। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকার কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মাষ্টার্স সমমান স্বীকৃতি দিয়েছে। অতএব, আমি মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়ের সমীপে প্রস্তাবনা পেশ করছি, বাংলাদেশের কওমি মাদরাসার সনদ মূল্যায়ন করে মদীনা ইউনিভার্সিটিসহ সৌদির ভার্সিটিগুলোতে কওমি ছাত্রদের সরাসরি ভর্তির সুযোগদানে যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।

প্রসঙ্গত, মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্য, মধ্যপন্থা ও সহনশীলতা প্রসারের লক্ষ্যে মক্কায় দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক ইসলামি সম্মেলন শুরু হয়েছে। এতে ইসলামিক স্কলার, মুফতি, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ, ইসলামি সংস্থার প্রধান, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাবিদসহ বিশ্বের ৮৫টি দেশের দেড় শতাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব অংশ নিয়েছেন। সৌদি বার্তা সংস্থা এসপিএ সূত্রে জানা যায়, ‘বিশ্বের ধর্মবিষয়ক বিভাগ, ইফতা, মাশায়েখ ও সংশ্লিষ্টদের মধ্যে যোগাযোগ তৈরি’ শীর্ষক এ সম্মেলন সাতটি পর্বে অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল প্রথম পর্বে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদান করেন কওমি মাদরাসা শিক্ষার সর্বোচ্চ অথরিটি আল-হাইয়াতুল উলয়া লিল- জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মুহিউস সুন্নাহ আল্লামা মাহমূদুল হাসান।

যে প্রধান সাতটি বিষয়ে সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর মধ্যে প্রথমে রয়েছে, ইসলাম ও মুসলিমদের সেবা এবং ঐক্য প্রসারে বিশ্বের ধর্ম বিষয়ক বিভাগ, ফতোয়া ও মাশায়েখদের প্রচেষ্টা।

অন্য বিষয়গুলো হলো, বাস্তবতা ও আকাঙ্ক্ষার মধ্যে সংযোগ ও একীকরণ সুদৃঢ় করা, জনগণের মধ্যে সহনশীলতা ও সহাবস্থানের মূল্যবোধ উন্নতির প্রচেষ্টা, পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহর শিক্ষাকে মেনে চলা, কুরআন ও সুন্নাহে মধ্যপন্থা অনুসরণ এবং ধর্ম বিষয়ক বিভাগ, ফতোয়া ও মাশায়েখদের প্রচেষ্টা সুদৃঢ় করা।

এর মধ্যে আরো রয়েছে, চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করা এবং সমাজকে নাস্তিকতা ও অবক্ষয় থেকে রক্ষার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *