মুফতি ফয়জুল করীমের ওপর হামলা : আলেম ও রাজনীতিবিদদের তীব্র নিন্দা

মুফতি ফয়জুল করীমের ওপর হামলা : আলেম ও রাজনীতিবিদদের তীব্র নিন্দা

সদ্য সমাপ্ত বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদপ্রার্থী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির মুফতি ফয়জুল করীমের ওপর হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক দল ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ।

বাংলাদেশের কওমি মাদরাসাগুলোর সর্বোচ্চ সংগঠন আল-হাইআতুল ‍উলয়া লিল জামিয়াতিল কাওমিয়ার চেয়ারম্যান, কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকের সভাপতি, রাজধানীর জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলূম মাদানিয়া যাত্রাবাড়ির মুহতামিম, মজলিসে দাওয়াতুল হক বাংলাদেশের আমির মুহিউস সুন্নাহ আল্লামা মাহমূদুল হাসান এই হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, মুফতি ফয়জুল করীম বাংলাদেশের একজন গ্রহণযোগ্য আলেমে দ্বীন। ইসলামের দাওয়াত ও তাবলীগের কাজে তার ভূমিকা চর্চিত ও সমাদৃত। সারাদেশে তার অনেক অনুসারী ও ভক্ত-মুরিদ রয়েছে। এমন একজন সম্মানী ও নির্বিবাদী আলেমের ওপর প্রকাশ্য দিবালোকে হামলার ঘটনা দেশের জন্য একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়। এ ঘটনা সারাদেশের আলেম সমাজ ও ইসলামপ্রিয় মানুষদের বিদগ্ধ করেছে। যে বা যারাই এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার সাথে জড়িত, তাদেরকে দ্রুত বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানাচ্ছি।

ন্যাক্কারজনক এই ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়েছেন উপমহাদেশের অন্যতম বৃহৎ অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের আমীর আল্লামা শাহ মুহ্ব্বিুল্লাহ বাবুনগরী। আমিরে হেফাজত বলেন, ৯২ ভাগ মুসলিম অধ্যুষিত দেশে প্রকাশ্য দিবালোকে প্রশাসনের চোখের সামনে নবীদের উত্তরসুরী একজন আলেমের উপর সন্ত্রাসীদের নির্ব্ঘি হামলার ঘটনা কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এই ঘটনা দেশের আলেম সমাজ ও ইসলামপ্রিয় তাওহিদী জনতার হৃদয়ে মারাত্মকভাবে আঘাত দিয়েছে। আলেম-ওলামারা উভয় জগতে সম্মানিত। এদের সম্মান করা সকল মুসলিমের নৈতিক দায়িত্ব। আমি জানি এ দেশের জনগণ দ্বীনপ্রিয়, রসূলপ্রিয় এবং আলেম-ওলামা ও পীর-মাশায়েখপ্রিয়। দেশের কোন সুনাগরিকের পক্ষ থেকে এরূপ আচরণ আশাতীত ব্যাপার।

হামলার ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ বলেন, মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করীম বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত আলেম ও আধ্যাত্মিক রাহবার। বাংলাদেশে ইসলামের প্রচার ও প্রসারে তাঁর পরিবারের ঐতিহাসিক ভূমিকা রয়েছে। প্রকাশ্য দিবালোকে এমন একজন দেশপ্রেমিক নির্বিবাদী আলেমের ওপর বিনা অভিযোগে হামলার ঘটনায় আমরা ব্যথিত ও মর্মাহত। যে বা যারাই এই ন্যাক্কারজনক হামলার সাথে জড়িত, দ্রুত তাদেরকে বিচারের আওতায় এনে ন্যায়ের দৃষ্টান্ত স্থাপন ও শান্তিময় পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

এই হামলার নিন্দা জানিয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করিমের ওপর হামলার ঘটনায় আবারও প্রমাণিত হলো-নিশিরাতের বর্তমান অবৈধ সরকারের অধীনে অবাধ, নিরক্ষে ও সুষ্ঠু নির্বাচন কখনোই সম্ভব নয়, এদের আমলে দেশে নির্বাচনের কোন পরিবেশ নেই। প্রকাশ্য দিবালোকে প্রশাসনের নাকের ডগায় একজন ধর্মীয় নেতা ও মেয়র প্রার্থীর ওপর সন্ত্রাসীদের হামলার ঘটনা কাপুরুষোচিত ও ন্যাক্কারজনক। আমি এই ঘটনায় তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানাচ্ছি।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সভাপতি মাওলানা শায়খ জিয়া উদ্দীন ও মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী এই হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, একজন প্রার্থীকে নিরাপত্তা দিতে না পারার দায় নির্বাচন কমিশন ও সরকারকে নিতে হবে। আমরা এই ন্যক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই এবং সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদেরে সনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনারও দাবী করছি। এই ঘটনার মাধ্যমে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের জনদাবী আরো শক্তিশালী হবে ইনশাআল্লাহ।

এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাছুম বলেন, মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়জুল করিমের ওপর হামলার ঘটনার দ্বারা প্রমাণিত হচ্ছে যে, বর্তমান সরকারের আমলে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই। প্রকাশ্য দিবালোকে প্রশাসনের লোকজনের সামনে একজন ধর্মীয় নেতা ও মেয়র প্রার্থীর ওপর সন্ত্রাসীদের হামলার ঘটনা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অবিলম্বে মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়জুল করিমের ওপর হামলাকারীদের গ্রেফতার করে উপযুক্ত শাস্তি প্রদান করার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

মুফতি ফয়জুল করীমের ওপর সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়ে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমীর মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী বলেন, একজন আলেমের উপর এই ধরনের বর্বরোচিত হামলা কোনোভাবেই জাতি মেনে নিবে না। যেসব সন্ত্রাসীরা এ হামলা করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য সরকারকে দায়ী দায়িত্ব বহন করতে হবে। এ হামলায় প্রমাণ করে নির্বাচন কমিশন একজন মেয়র প্রার্থীকেও নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থতার পরিচিতি দিয়েছে। প্রার্থী এবং ভোটারদের নিরাপত্তার বিধানে ব্যর্থ হলে নির্বাচনে মানুষ প্রার্থী ও ভোট দিতে আসবে না।

মুফতী ফয়জুল করীমের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত আমীর মাওলানা আবদুল বাছিত আজাদ ও মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেন, নির্বাচনের সুষ্ঠ পরিবেশ না থাকার কারণে খেলাফত মজলিস চলমান সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থেকেছে। আজ বরিশালে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থীর উপর ন্যাক্কারজনক হামলা চালিয়ে নির্বাচনের পরিবেশ বিনষ্ট করা হয়েছে। একটি দলের সর্বোচ্চ নেতা যেখানে নিরাপদ থাকে না সেখানে ভোটাররা কিভাবে নিরাপদে ভোট দিতে যেতে পারে? একজন মেয়র প্রার্থীর উপর সরকার দলীয় সন্ত্রাসীদের হামলায় আবারো প্রমাণ করে এই সরকার দেশে কোন সুষ্ঠ নির্বাচন দিতে পারবে না। প্রধান নির্বাচন কমিশনার তার দ্বায়িত্ব অবহেলা করেছেন। আমরা এই হামলার তীব্র নিন্দা জানাই এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। আমরা সুষ্ঠু ও অবাধ জাতীয় নির্বাচনের লক্ষ্যে অবিলম্বে একটি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার জোর দাবি জানাচ্ছি।

মুফতি ফয়জুল করীমের উপর সন্ত্রাসীদের হামলার তীব্র নিন্দা ও দোষীদের গ্রেফতার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানিয়ে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমীর শায়খুল হাদীস আল্লামা ইসমাঈল নূরপুরী ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ বলেন, মুফতি ফয়জুল করিম একজন আলেম ও শ্রদ্ধীয় ব্যক্তি এবং মেয়র প্রার্থী তিনি বিভিন্ন ভোট কেন্দ্র পরিদর্শনে যান এবং দেখেন সরকার দলীয় লোকজনের প্রভাব সৃষ্টিকারী আচরন। এসব বিষয়ে তিনি রিটার্নিং অফিসারের কাছে অভিযোগ করে ২২ নং ভোট কেন্দ্র সাবেরা স্কুল কেন্দ্রে গেলে তার উপর সরকার দলীয় সন্ত্রাসীরা হামলা করে তাকে রক্তাক্ত করে। এধরণের ঘটনা রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত কাজ। এটা কোনো সভ্যসমাজে হতে পারে না। একজন আলেম প্রার্থীর সাথে এধরণের ন্যাক্কারজনক ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ করার ভাষা আমরা হারিয়ে ফেলেছি। দ্রুত হামলাকারীদের গ্রেফতার ও কঠোর শাস্তি দিতে হবে যাতে আগামীতে এধরণের ঘটনা ঘটানোর সাহস কেউ না পায়।

এই হামলার প্রতিবাদে ছারছীনার পীর ছাহেব মাওলানা শাহ মো. মোহেব্বুল্লাহ বলেন, মাওলানা সৈয়দ ফজজুল করিম একজন প্রখ্যাত আলেম, পীর-কামেলের পুত্র পীর। তার ওপর হামলা হয়েছে, তাকে আহত করা হয়েছে জেনে আমি দারুণভাবে উদ্বিগ্ন। এক জঘন্য অপরাধ। এ ঘটনা যেমন নির্বাচনী নীতিমালার চরম লঙ্ঘন, তেমনি দেশের আইনবিরোধী, নীতি-নৈতিকতার পরিপন্থি, মানবতাবিরোধী অপরাধ। এর জন্য অবিলম্বে দায়ী ব্যক্তিদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা হোক। এতে ব্যর্থ হলে দেশের শান্তি বিঘিত হবে এবং তা হবে সবার জন্য ক্ষতিকর।

এছাড়া শায়েখে চরমোনাই মুফতি ফয়জুল করীমের সার্বিক খোঁজ-খবর নেয়ার জন্য বরিশালের চরমোনাই ছুটে যান বর্ষীয়ান আলেমে দ্বীন আল্লামা আব্দুল হামিদ পীর সাহেব মধুপুর, নেছারাবাদ কমপ্লেক্স ঝালকাঠির পীর মাওলানা খলীলুর রহমান নেছারাবাদী, মাও. আব্দুল্লাহ মোহাম্মাদ হাসান পীর সাহেব বাহাদুরপুর, বাংলাদেশ মুফাসসির পরিষদের নেতৃবৃন্দ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস বরিশাল মহানগর নেতৃবৃন্দ, দক্ষিণ বঙ্গের ঐতিহ্যবাহী গালুয়া দরবারের পীর মাওলানা আ. রহিমসহ কলবরবের শিল্পীরা।

এদিকে তিনি বলেন, আমি আমার পুরো জীবন আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। গত ৩০ বছর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সাংগঠনিক দায়িত্বে থেকে একজন একনিষ্ঠ আওয়ামীকর্মী হিসেবে কাজ করছি। তবে গতকাল আওয়ামীপন্থি কিছু লোক একজন আলেমের ওপরে হামলা করায় আমি ব্যথিত। একজন মুসলমান হিসেবে এ হামলার প্রতিবাদস্বরূপ লম্বা আওয়ামী জীবনের ইতি টেনেছি।

প্রসঙ্গত, বরিশাল সিটি নির্বাচনের ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মনোনীত হাতপাখা প্রতীকের মেয়রপ্রার্থী মুফতি মুহাম্মাদ ফয়জুল করীমের ওপর হামলা চালায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর কর্মীরা।

সোমবার (১২ জুন) সকাল ১০টায় নগরীর ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউনিয়া এ কাদের চৌধুরী স্কুল কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, মেয়র প্রার্থীর মিডিয়া সমন্বয়ক সানাউল্লাহ, কাউনিয়া এ কাদের চৌধুরী স্কুল কেন্দ্রে ইসলামী আন্দোলন প্রার্থীদের ওপর হামলা করেছে আওয়ামী লীগের সমর্থকরা। পরে সংবাদ পেয়ে মুফতি ফয়জুল করীম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে কেন্দ্রের বাইরে তার গাড়ি ও সঙ্গে থাকা লোকজনের ওপর হামলা চালায় নৌকার কর্মীরা।

এই হামলার পর নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার আগেই বরিশাল ও খুলনার নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করে ইসলামী আন্দোলন। এছাড়া সিলেট ও রাজশাহীতে নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দেয় দলটি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *