শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানো নবী কারিম সা. এর আদর্শ

শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানো নবী কারিম সা. এর আদর্শ

তোমরা তাদের দান করো আল্লাহর সেই সম্পদ থেকে, যে সম্পদ আল্লাহ তোমাদের দান করেছেন (সুরা নূর- ৩৩)। যে মানুষের প্রতি দয়া করে না, আল্লাহও তার প্রতি দয়া করেন না (মুসলিম- ২৩১৯)।

“যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের পার্থিব একটি মুসিবত দূর করবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার মুসিবতগুলো দূর করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো অভাবী মানুষকে সচ্ছল করে দেবে, আল্লাহ তাকে ইহকাল ও পরকালে সচ্ছল করে দেবেন এবং আল্লাহ বান্দাকে সাহায্য করবেন, যদি বান্দা তার ভাইয়ের সাহায্য করে।’ (মুসলিম)।

হু হু করে বাড়ছে শীতের প্রকোপ। চলমান শীত মৌসুম অনেকের দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সমাজের সচ্ছল মানুষের ঘরে বছর পরিক্রমায় শীত ঋতু হিসাবে আনন্দ ও খুশির বার্তা নিয়ে এলেও দেশের বৃহত্তর জনজীবনে শীত, নৈরাশ্য ও বেদনার ধূসর বার্তাবাহক মাত্র। হাড় কাঁপানো শীত ও ঘন কুয়াশায় বিপর্যস্ত জনজীবনে শৈত্যপ্রবাহ থেকে বাঁচার জন্য অসহায় দরিদ্র মানুষের প্রয়োজন অনেক শীতবস্ত্রের।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের দরিদ্র ও ছিন্নমূল জনগোষ্ঠী তীব্র এই শীতে নিদারুণ কষ্ট ভোগ করছেন। খোলা আকাশের নিচে অন্ন-বস্ত্রহারা মানুষগুলো খড়কুটা জ্বালিয়ে শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। সামনে প্রচন্ড শৈত্য প্রবাহের আশঙ্কা থাকায় শীতকেন্দ্রিক দুর্ভোগ আরো বাড়তে পারে। এমতাবস্থায় সমাজের বিত্তবান ও মানবিক গুণসম্পন্ন ব্যক্তিদের দায়িত্ব হচ্ছে অসহায় শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানো।

ইসলাম মানবীয় গুণাবলীর ক্ষেত্রে পরোপকার ও জনকল্যাণমূলক কাজকে অন্যতম শ্রেষ্ঠ গুণ আখ্যা দিয়ে এর প্রতি উৎসাহ দিয়েছে। মহাগ্রন্থ আল কোরআনে ‘সূরা কসাস’ -এর ৭৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, তোমরা মানুষের প্রতি তেমন অনুগ্রহ করে (সাদক্বাহ বা যে কোনো উপায়ে) যেমন আল্লাহ তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন।

বিশ্ব মানবতার মুক্তির দিশারী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের পার্থিব একটি মুসিবত দূর করবে, আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন তার মুসিবতসমূহ দূর করে দিবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো অভাবী মানুষকে সচ্ছল করে দিবে, রব্বে কারীম তাকে ইহকাল ও পরকালে সচ্ছল করে দিবেন এবং আল্লাহ বান্দার সাহায্য করবেন যদি বান্দা তার ভাইয়ের সাহায্য করে’। (মুসলিম)।

–অসহায় শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানো নববী আদর্শ। কারণ, খেদমতে খালক্ব বা সৃষ্টির সেবা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিধান ও ইবাদত। এ ব্যাপারে ত্রুটি হলে কেয়ামতের দিন আল্লাহর সামনে জিজ্ঞাসিত হতে হবে। প্রশ্ন করা হবে বস্ত্রহীনদের বস্ত্রদান ও ক্ষুধার্তদের খাদ্যদান সম্পর্কে।

এদিকে প্রচন্ড শীতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা শীতজনিত রোগ তথা ডায়রিয়া, নিউমেরিয়া, কাশি-সর্দি রোগের আশঙ্কা করছেন, আর শীতজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব থেকে রক্ষা পেতে হলেও প্রয়োজন সুচিকিৎসা ও ওষুধপথ্য এবং শীত প্রতিরোধে সরকারি-বেসরকারিভাবে কার্যকর উদ্যোগ। বিশেষ করে শিশুরা গণহারে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কায় তাদের সুচিকিৎসার ব্যাপারে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না নিলে শীতে দুর্ভোগ যেমন বাড়বে, তেমনি শীতজনিত মৃত্যুর হারও বাড়বে।

তাই জাতি-ধর্ম-বর্ণ, দলমত-নির্বিশেষে সমাজের ধনাঢ্য ও বিত্তবান ব্যক্তিদের শীতার্ত বস্ত্রহীন মানুষের পাশে অবশ্যই দাঁড়াতে হবে। নবি করিম (সা.) মানুষকে অন্ন ও বস্ত্রদানের পরকালীন পুরস্কারপ্রাপ্তির কথা বলেছেন, “এক মুসলমান অন্য মুসলমানকে কাপড় দান করলে আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতের পোশাক দান করবেন। ক্ষুধার্তকে খাদ্য দান করলে আল্লাহ তা’য়ালা তাকে জান্নাতের সুস্বাদু ফল দান করবেন।

কোনো তৃষ্ণার্ত মুসলমানকে পানি পান করালে মহান আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতের সিলমোহরকৃত পাত্র থেকে পবিত্র পানীয় পান করাবেন”। (সুনান আবু দাউদ)।

তাই আসুন, দলমত নির্বিশেষে আমরা অসহায় শীতার্তদের পাশে দাঁড়াই। মহান আল্লাহ তা’য়ালা আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর তৌফিক দিক। আ-মীন।

লেখক: তরুণ আলেম ও কলামিস্ট। আবু তালহা তোফায়েল

 

সম্মানিত পাঠক, আমাদের ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেইজে আপনাকে স্বাগতম

Please Follow US – Halaltune.com | Facebook 

Please Subscribe US – Halal Tune Blog | Youtube

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *